দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত বিভিন্ন বার ও রেস্তোরাঁয় হুইস্কি ও বিয়ারসহ মদ জাতীয় পণ্য বিক্রি ও উৎসে মূসকের বিপরীতে ৭৩ লাখ ৭ হাজার ৮৫৫ টাকা ভ্যাট ফাঁকির সুনিদিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা উত্তর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অনুসন্ধানে পর্যটন কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে ৭৩ লাখ ৭ হাজার ৮৫৫ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উঠে এসেছে। তবে অনেক চেষ্টার পরও পর্যটন কর্পোরেশন ভ্যাটের বকেয়া টাকা পরিশোধ করছে না।
অবশেষে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পর্যটন কর্পোরেশনকে আরও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ভ্যাটের বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য তাদেরকে ৬টি কিস্তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। গত আগস্ট মাস থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ওই টাকা পরিশোধের সুযোগ পাচ্ছে পর্যটন কর্পোরেশন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের গঠিত নিরীক্ষা দল পর্যটন কর্পোরেশনের ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত ৪ বছরের অডিট সম্পন্ন করে। পরিচালতি অডিট টিম পর্যটন কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে এক কোটি দুই লাখ ৯০ হাজার ৯৮২ টাকার অডিট আপত্তি উত্থাপন করে। এরমধ্যে পর্যটন কর্পোরেশনের কাছে সবমিলিয়ে সুদ ব্যতীত ৭৩ লাখ ৭ হাজার ৮৫৫ টাকার ভ্যাট আদায়যোগ্য বলে সুপারিশ করেছে। সব সুদ মওকুফ করে শুধুমাত্র বকেয়া ভ্যাটের টাকা পরিশোধের জন্য কিস্তি সুবিধা দেওয়ার পরও পাওনা টাকা পরিশোধ করেনি পর্যটন কর্পোরেশন।
সূত্র মতে, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অনুসন্ধান প্রতিবেদন অনুযায়ী, পর্যটন কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে শুধু আমদানি মূল্যের ওপর শুল্ক-কর আদায় করলেও সংযোজিত ইনভেন্টরি ভ্যালু (নিজস্ব ব্যয়) ও মুনাফাসহ বিক্রয় মূল্যের ওপর ভ্যাট আদায় না করে রাজস্ব ক্ষতি করেছে।ভ্যাট আদায়ের জন্য মূল্য সংযোজন কর আইন- ১৯৯১ এর ৫৫ ধারার ১ উপধারা অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৬ জুন দাবিনামা জারি করে ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। এমনকি ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের শুনানিও নেওয়া হয়েছে। শুনানি ও নথিপত্র পর্যালোচনায় সরকারি প্রতিষ্ঠানটির ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন বার ও রেস্তোরাঁয় হুইস্কি ও বিয়ারসহ মদ জাতীয় পণ্য বিক্রির বিপরীতে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটিত হয়।
অডিট টিমের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে পর্যটন কর্পোরেশনের বিভিন্ন বার ও রেস্তোরাঁয় মদ জাতীয় পণ্য বিক্রির বিপরীতে পাওনা ভ্যাটের পরিমাণ ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ৫৪০ টাকা। অন্যদিকে, শুধু ২০১২-১৩ অর্থবছরে উৎসে মূসকের পরিমাণ ২৮ লাখ ৬৬ হাজার ৩১৫ টাকা। সবমিলিয়ে সুদ ব্যতীত তাদের কাছ থেকে ৭৩ লাখ ৭ হাজার ৮৫৫ টাকার ভ্যাট আদায়যোগ্য।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভ্যাটের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, পর্যটন কর্পোরেশনের কাছে সবমিলিয়ে সুদ ব্যতীত ৭৩ লাখ ৭ হাজার ৮৫৫ টাকার ভ্যাট আদায়যোগ্য। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের সুদ মওকুফ করে কিস্তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তারপরও পাওনা না পাওয়া দুঃখজনক।
উল্লেখ্য, দেশে মদ বা হুইস্কি আমদানির ক্ষেত্রে ৩৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কসহ ভ্যাট, কাস্টমস ডিউটি, রেগুলেটরি ডিউটি, অগ্রিম আয়কর বা আগাম কর (এটি), ল্যান্ডিং চার্জ, ইন্স্যুরেন্স, মূল্য সংযোজন কর- সবমিলিয়ে ৪৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। হুইস্কি বা ভদকার মতো পানীয় আমদানিতে শুল্কের হার ৬০০ শতাংশের বেশি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের শুল্কমুক্ত বিপণিতে পণ্য সরবরাহ করা হয়।
শুল্কমুক্ত ওই বিপণি থেকে ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী যাত্রীদের কাছে পণ্য বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া মহাখালী বন্ডেড ওয়্যারহাউজ ও র্যাম্প বন্ডেড ওয়্যারহাউজ থেকে দেশের ভেতরে অনুমোদিত কিছু বার ও হোটেলে বন্ড কমিশনারেট ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন সাপেক্ষে দেশীয় ভোগের জন্য শুল্ক-কর আদায় করে পণ্য বিক্রি করা হয়।# কাশেম