দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও বিশিষ্টজনরা পৃথকভাবে দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে প্রকাশ্যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, বিপর্যস্ত নির্বাচন ব্যবস্থা বহাল রেখে শিগগিরই সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই। তারা বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে এখনই আইন প্রণয়ন প্রয়োজন।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের বার্ষিক সম্মেলনে বক্তারা এ সব কথা বলেন।
বিশিষ্টজনরা বলেন, দেশের বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ফলে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কমছে। যা সত্যই উদ্বেগের বিষয়।
সম্মেলনে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, নির্বাচনী সংস্কার ও কার্যকর জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠাসহ ২০ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
সম্মেলনে সুজনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। উদ্বোধনী সেশনে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আবু হেনা, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রমুখ।
এতে সভাপতিত্ব করেন সুজনের সভাপতি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান।
আবু হেনা বলেন, বিগত সময়ে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও সুজনসহ অন্যদের ধারাবাহিক অ্যাডভোকেসির ফলে দেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচনী ব্যবস্থায় বিভিন্ন সংস্কার সাধন করা সম্ভব হয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন সচিবালয়, আরপিও এবং আচরণবিধির সংশোধন, প্রার্থীদের তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের বিবরণ দেয়ার বিধান ইত্যাদি। কিন্তু এতসব সংস্কারের পরও আজ আমরা কেন গণতন্ত্র ও সুশাসন নিয়ে চিন্তিত?
তিনি বলেন, যতই আইন করা হোক না কেন, যদি সেগুলো কার্যকর করা না হয় এবং সমভাবে সবার জন্য বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় স্বচ্ছ নির্বাচনের ওপর জোর দিয়ে সাবেক এই সিইসি বলেন, দুর্নীতি বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না।
প্রশাসনিক ও সামাজিক সংস্কারের সুফল জনগণ পাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ড. আকবর আলী খান বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি এখন এক দফা হওয়া উচিত- সেটি হল নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করার দাবি তোলা উচিত।
তিনি বলেন, সুশীল সমাজের যে ভূমিকা এটা নিয়ে অনেকের সন্দেহ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন যে, সুশীল সমাজ থেকে রাজনীতি করা হবে। আমি কিন্তু এ সম্পর্কে বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, দেশে রাজনীতি থাকুক আর নাই থাকুক সুশীল সমাজকে রাজনীতি থেকে স্বতন্ত্র হতে হবে।
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে কম ভোট পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কোনোমতেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের চেয়ে বেশি ভোট কেন্দ্রীয় নির্বাচনে পড়ার কথা নয়।
সেই হিসাবে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনে হয়তো ৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে। আর বাকি ৫০ শতাংশ ভোট ফাঁকিফক্কর। রাজনৈতিক দলগুলো যে সমস্যার সৃষ্টি করেছে তার সমাধান সহজে করবে বলে মনে হয় না।
এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখব কিনা- সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে। তাই দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণকে সোচ্চার হতে হবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই অকার্যকর হয়ে পড়ে। বর্তমানে নির্বাচনী ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়া মানে হল, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা বদলের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া।
গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ২০১৪ সাল বা ২০১৮ সালের নির্বাচনে সাধারণ নাগরিকদের ভোটের অধিকার নিয়ে এমনভাবে তামাশা করা হয়েছে, এমনভাবে অপমান করা হয়েছে তারা আর ভোট দিতে যান না। নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর সরকারি দল এমনভাবে কর্তৃত্ব কায়েম করছে যাতে তাদের বিজয় সুনিশ্চিত হয়।
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, সরকারি দলের নেতারা নিজেরাই বলছেন আমাদের লোক ভোট দিতে যাচ্ছে না কেন? সরকারি দল ও বিরোধী দল যৌথভাবে এ ভাবনা করা উচিত।
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রওনক জাহান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান প্রমুখ। # কাশেম