দূরবীণ নিউজ ডেস্ক:
আলোচিত নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানাধীন ঝাউচরে ভাড়াটিয়ে সেজে বাড়ির মালিককে অজ্ঞান করে ও তার স্ত্রীর হাত পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যার পরে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ মালামাল লুটকারীদের ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
মালামাল লুট ও হত্যার ২০ দিনের মাথায় আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দ্রুত এর চার্জশিট দেয়া হবে। দ্রুত বিচার হলে অপরাধীরা ভয় পাবে, তারা বুঝতে পারে অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না বলেছেন সিআইডি।
লুটপাট ও হত্যার ঘটনায় দুই দফায় ৪ জনকে গ্রেফতারের পর আজ সোমবার (১৭ মে) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি (ঢাকা ও ময়মনসিংহ) ইমাম হোসেন এসব তথ্য জানান।
ডিআইডির গ্রেফতার কৃতারা হলেন , ওই বাসার মালিক আজিম উদ্দিনের ভাড়া টিয়ে- হারুণ অর রশীদ ও তার স্ত্রী সুলতানা খাতুন, বহিরাগত সুমন ও শিপন। প্রথামে বৃদ্ধার বাড়ির ভাড়াটিয়া দম্পতিকে গ্রেফতার করে সিআইডি। আর দ্বিতীয় দফায় গ্রেফতার করা হয়-সুমন শিপনকে।
সিআইডির কর্মকর্তা জানান, ৪মাস আগে তারা ওই বাসটি ভাড়া নেয়। পরে গত ৮ মে ওই বাসার মালিক আজিম উদ্দিন (৭০) নেশাজাতীয় খাবার খাইয়ে অজ্ঞান করে এবং তার স্ত্রী হোসনে আরা বেগমকে (৬৪) হাত পা বেঁধে ও মুখে স্কচটেপ পেচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর মালামাল লুট করেছে।
পরদিন ৯ মে অচেতন অবস্থায় আজিম উদ্দিন এবং তার স্ত্রী হোসনে আরা বেগমকে হাত পা বেঁধে ও মুখে স্কচটেপ পেচানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাদের হাসপাতালে নেয়ার পর আজিম উদ্দিনের জ্ঞান ফিরলেও স্ত্রী হোসনে আরা বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
এই ঘটনায় সোনারগাঁও থানায় আজিম উদ্দিনের ছেলে আল আমিন বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি।
আর এই ঘটনার পর ওই বাসা ভাড়াটিয়া হারুন অর রশীদ ও তার স্ত্রী সুলতানা খাতুন পলাতক ছিলেন। তারা পালিয়ে রংপুরের মিঠাপুকুর যান। গত ১২ মে গাজীপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করে সিআইডি। তারা দুজন আদালতে অপরাধের দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, ‘জবানবন্দিতে হারুন অর রশীদ ও সুলতানা খাতুন দম্পতি স্বীকার করেছেন তারা একটি ডাকাত চক্রের হয়ে নারায়ণগঞ্জের ওই বৃদ্ধার বাড়িটি ভাড়া নেন। এর মূলহোতা শিপন ও সুমন। যারা ওই বাড়িটি আগেই রেকি করেছিলেন। তারা নিজেরাই ভাড়া নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বাড়িওয়ালা আজিম উদ্দিন তাদের ভাড়া দেননি। এরপর এই দম্পতিকে নিয়ে আসেন তারা।’
তিনি বলেনন, ‘হত্যাকাণ্ডের চারমাস আগে আজিম উদ্দিনের বাড়ি ভাড়া নেন হারুণ অর রশীদ ও তার স্ত্রী সুলতানা খাতুন। বাড়ির মালিক আজিম উদ্দিনকে প্রায়ই চা খাওয়াতেন হারুনের স্ত্রী সুলতানা। আজিম উদ্দিনও তাদের কাছে যেতেন। তবে আজিম উদ্দিনের স্ত্রী কখনো যেতেন না। এমনকি তিনি আজিম উদ্দিনকেও নিষেধ করতেন।’
‘গত ৭ মে রাতে বাড়ির মালিক আজিম উদ্দিনকে প্রথমে চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান হারুনের স্ত্রী সুলতানা খাতুন। তবে তিনি অচেতন না হওয়াতে ওই রাতে তারা ডাকাতি করতে পারেননি।
৮ মে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে রাতে ডাকাত চক্রের মূলহোতা শিপন ও সুমন ওই বাড়িতে যান। ঘরে ঢুকে বৃদ্ধার হাত-পা বেঁধে ফেলেন। তার মুখও গামছা দিয়ে বেধে ফেলেন। এরপরও তিনি চিৎকার করার চেষ্টা করলে লাইট বন্ধ করে স্কচটেপ দিয়ে তার মুখোমন্ডল পেচিয়ে ফেল ডাকাতি করে পালিয়ে যান। সেসময় বাইরে হারুনের স্ত্রী পাহারায় ছিলেন।’
ইমাম হোসেন বলেন, ‘মূল পরিকল্পনাকারী শিপন ও সুমন। টোপ হিসেবে হারুন অর রশীদ ও তার স্ত্রী সুলতানা খাতুনকে ব্যবহার করেছেন তারা। শিপন ও সুমনকে ১৬ মে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তারা জানিয়েছেন, হারুনকে ডাকাতির ১১ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিছু নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করেছে তা উদ্ধারে কাজ চলছে। তবে বাড়িটি থেকে কী পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার নিয়েছে, তা নিহতের পরিবারের কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি।’
#