দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেশের আলোচিত ২৪ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ক্যাসিনোকান্ডে সংশ্লিষ্ট থাকা এবং অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত প্রায় ৫৮২ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করেছে বলে জানা যায়। দুদক আগামী নভেম্বরে ২২ মামলায় ২৪ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিলের প্রস্ততি নিচ্ছে। এ ২৪ আসামির মধ্যে ১৭ জনই যুবলীগ নেতা।
দুদকের মামলার পর সম্পদ জব্ধকৃত আসামিদের মধ্যে রয়েছে- ঠিকাদার জি কে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তার, যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রূপন ভূইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূইয়া, কলাবাগান ক্লাবে সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান (পাগলা মিজান), কাউন্সিলার তারেকুজ্জামান রাজীব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিস্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, বহিস্কৃত সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমান, যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী, কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগ নেতা মো. শফিকুল ইসলাম, যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিছুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমান, ব্যবসায়ী মো. সাহেদুল হক, এনআর গ্লোবালের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার, গণপূর্তের সিনিয়র সহকারী প্রধান মো. মুমিতুর রহমান ও তার স্ত্রী মোছাঃ জেসমীন পারভীন এবং গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৈাশলী উৎপল কুমার দে ও তার স্ত্রী গোপা দে।
এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত দায়ের করা ২২ মামলার চার্জশিট চলতি নভেম্বর মাসের মধ্যে দাখিল করা হবে। আসামীদের দখলে থাকা প্রায় ৫৮২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
জানা যায়,২০১৯ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীকে গ্রেপ্তার করেছে। এর পরে গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। আর এ কঠিন কাজে মাঠে নামেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবালের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি টিম।
দুদকের এটিমে অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্ব প্রাপ্ত সদস্যরা হলেন- উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. সালাহউদ্দিন, গুলশান আনোয়ার প্রধান, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, আতাউর রহমান ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।
দুদক ক্যাসিনো ও দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট দুই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। এরমধ্যে তাদের কাছে ৫৮২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে। তবে আদালতের নির্দেশনায় এসব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
দুদকের দায়ের করা মামলায় ক্যাসিনো কাণ্ডের ঘটনায় যুবলীগের বহিস্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর মামলায় দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। ওই একই দিন যুবলীগের ঢাকা দক্ষিণের বহিস্কৃত সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানের বিরুদ্ধে মামলায় দুই কোটি ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
গত বছর ২১ অক্টোবর যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ও জি কে বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী কথিত যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের বিরুদ্ধে মামলায় ২৯৭ কোটি আট লাখ ৯৯ হাজার ৫৫১ টাকার সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলের অভিযোগ রয়েছে। আর খালেদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৯ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ রয়েছে।
২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর দুদকের মামলায় গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু ও তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
গতবছর ২৭ অক্টোবর অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। গত বছর ২৯ অক্টোবর যুবলীগের বহিস্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও তার স্ত্রী সুমি রহমানের ১ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ রয়েছে।
গত বছর ৬ নভেম্বর কাউন্সিলর তারিকুজ্জামান রাজিবের বিরুদ্ধে ২৬ কোটি ১৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ এবং গত বছর ১৩ নভেম্বর যুবলীগ নেতা জাকির হোসেনের নামে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। #