দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
বিশ্ব নদী দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল আলোচনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণায়লরয়র সদিচ্ছা ও সহযোগিতার আহবান জানিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। সরকারের ভেতরে থেকে যারা নিয়ম ভঙ্গ করছে তাদের শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে।
সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর ) এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) যৌথ উদ্যোগে এবং জাতীয় দৈনিক ডেইলি স্টারের সহযোগিতায় এই ভার্চুয়াল গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এতে বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বিষয়ভিত্তিক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
মানবাধিকার কর্মী খুশী কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নদী বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত, ইঞ্জিনিয়ার ম. ইনামুল হক, ব্রতী’র নির্বাহী পরিচালক ড. শারমীন মুরশিদ ও এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।
এছাড়াও, রংপুর থেকে ড. তুহিন ওয়াদুদ, খুলনা থেকে অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির, সিলেট থেকে সালেহীন চৌধুরি, বরিশাল থেকে রফিকুল আলম, চট্টগ্রাম থেকে অলিউর রহমান, এবং বগুড়া থেকে হাসিবুল হোসেন বিলু নদী রক্ষায় স্থানীয় উদ্যোগ, সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তার উপস্থাপনায় দেশের নদ-নদীর একটি সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের বেশকিছু নদী রক্ষায় উচ্চ আদালতের রায় থাকার পরও এই নদীগুলো রক্ষা করা যাচ্ছে না। ট্যানারি শিল্পকারখানার মালিকেরা ইটিপি ব্যবহার করছে না।
সরকারকে প্রণোদনা দিয়ে হলেও আইন মানতে তাদের বাধ্য করা উচিত বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, সরকার নদী রক্ষা কমিশন গঠন করেছে ঠিকই কিন্তু নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় কাজগুলো করার জন্য কমিশনকে কোনো ক্ষমতায়িত করে নি। কমিশন এ পর্যন্ত নদী রক্ষায় ১২২ দফার সুপারিশ তৈরি করলেও বাস্তবায়নে যথাযথ কাজ করতে পারছে না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে উন্নয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি নদী দখল-দূষণও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। আদালতের রায় বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। নদী রক্ষার সাথে যে মন্ত্রণালয়গুলো জড়িত রয়েছে তাদের সদিচ্ছার অভাব আছে।
তিনি বলেন, নদী শুধু খনন করলেই চলবে না, নদীর দুই পাড়ও প্রসারিত করতে হবে। নদী কমিশন বিভাগওয়ারী প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ করেছে, যা আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রকাশিত হবে।
ড. আইনুন নিশাত বলেন, নদীর সংখ্যা নির্ধারণের আগে নদীর সংজ্ঞা আমাদের জানতে হবে। দখল-দূষণের বাইরেও নদীর জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, নদীর প্রবাহ কমে যাওয়া, সংকুচিত হয়ে যাওয়া এবং পানির গুনগত মান নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে নদীগুলো মরে যাচ্ছে।
নদী কমিশনের সদস্য শারমিন মুরশিদ বলেন, নদী কমিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে একটি টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি, উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন নিয়েও সরকারের আমলাদের সাথে নদী কমিশনের টানাপোড়েন চলছে। এই টানাপোড়েন দূর করতে সরকারের ভেতরে যারা নদী রক্ষায় অনিয়ম করছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
ম, ইনামুল হক বলেন, নদী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা আছে ঠিকই কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরেই কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় কাজ হচ্ছে না। জটিলতা কেন হচ্ছে সেটা ভাবা প্রয়োজন। জনস্বার্থে জনগণকে নদী দখল-দূষণবিষয়ক মামলা করার ক্ষমতা দেয়া হলে দ্রুত সমস্যা কমে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আইনগত ঘাপলা দূর করার জন্য পরিবেশ আইনের ১৭ নং ধারা সংশোধন করা প্রয়োজন।
এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, নদী রক্ষা কমিশন অনেক প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও কাজ করার চেষ্টা করছে। দেশের আইনি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে দ্রুত মামলার রায় পাওয়া যায়না। এই প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করার জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। নদীর মালিক সমগ্র জনগণ। আইনে এর বিধান থাকতে হবে।
তুহিন ওয়াদুদ বলেন, সিএস ম্যাপ ব্যবহার করে নদী চিহ্নিত করা হচ্ছে না। ড্রেজার দিয়ে নদীর তলদেশ দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয় নদী লিজ দিচ্ছে।
রফিকুল আলম বলেন, নদী উদ্ধারে এবং দখল-দূষণ প্রতিরোধে তরুণ সমাজকে এবং মিডিয়াকে কাজে লাগাতে হবে। সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন , হাওড় অঞ্চলের নদীগুলোতে ইউরেনিয়াম দূষণ দেখা দিয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ের আলোচনা শুরু করা না গেলে আগামীতে হাওরে চরম সংকট দেখা দেবে।
আনোয়ারুল কাদির বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রেক্ষাপটে নদী দখলের চেয়ে ভরাট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নদী ব্যবস্থাপনার সাথে পলি ব্যবস্থাপনাও করতে হবে একইসাথে। কারণ প্রায় প্রতিটি নদীর মুখে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে শাখা নদীগুলো মরে যচ্ছে। লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সভাপতি খুশি কবির বলেন, রাষ্ট্রের ভ্রান্ত উন্নয়ন নীতি ও প্রকল্পগুলো নানাভাবে নদীগুলোকে হত্যা করছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও কেন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না । সেটা চিহ্নিত করা প্রয়োজন। তিনি জাতীয় নদী কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি ওয়াচডগ প্লাটফর্ম গঠন করার সুপারিশ করেন।
এছাড়াও আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের আলিউর রহমান, সাংবাদিক হাসিবুর রহমান বিলু প্রমুখ। # প্রেস বিজ্ঞপ্তি