দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অসহযোগিতার কারণে কলাবাগান মাঠে পূজা করতে না পারার অভিযোগ সংক্রান্ত ‘ধানমন্ডি সার্বজনীন পূজা কমিটি’ এর সংবাদ সম্মেলন, উক্ত সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচারের মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান এবং অনাকাঙ্ক্ষিত তথ্য উপস্থাপনের বিষয়াদি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
৮ অক্টোবর (শুক্রবার) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছেরের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ‘ধানমন্ডি সার্বজনীন পূজা কমিটি’ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
‘ধানমন্ডি সার্বজনীন পূজা কমিটি সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যের মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপপ্রয়াস সুস্পষ্ট।
ছবি -৮ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে, আয়োজিত ধানমন্ডি সার্বজনীন পূজা কমিটির সংবাদ সম্মেলনের
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা পুরো প্রতিবাদ লিপিতে নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হয়েছে;-
সংবাদ সম্মেলনে সরবরাহকৃত লিখিত বক্তব্য “ধর্ম নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে পাওয়া স্বাধীনতা আজ সাম্প্রদায়িকতার আঘাতে নিরবে কাঁদে!” শীর্ষক বক্তব্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক এবং এতে গর্হিত শব্দমালা ব্যবহার করা হয়েছে।
এ ধরনের বিদ্বেষমূলক বক্তব্যে আমরা খুবই মর্মাহত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বাংলাদেশ’ আজ যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাবিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জল ও অনন্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত তখন এ ধরনের বক্তব্য স্বার্থন্বেষী মহলের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য সাধন ও চাঁদাবাজির অভিলাষ পূরণের নামান্তর।
২) সংবাদ সম্মেলনে “স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র থাকার পরেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অসহযোগিতার কারণে” পূজা উদযাপন করতে পারছেন না বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অভিযোগ করেছেন।
ছবি- ২০১৯ সালের কলাবাগান মাঠে পূজা আয়োজনের পর ক্ষতিগ্রস্থ মাঠের স্থিরচিত্র।
কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় হতে “পূজা উদযাপন কমিটি কর্তৃক পূজা উদযাপনকালে কলাবাগান ক্রীড়াচক্র মাঠ ও মাঠের স্থাপনাসমূহের কোন প্রকার ক্ষয়ক্ষতি/বিনষ্ট না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে”– এমন শর্তসাপেক্ষে পূজা আয়োজনের অনুমতি প্রদান করার বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উল্লেখ করেননি।
এর ফলে আংশিক তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সার্বিক অবস্থানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস লক্ষণীয়।
এছাড়াও মন্ত্রণালয় প্রদত্ত ‘শর্তসাপেক্ষ অনুমতি প্রদান’ করার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে যে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে, প্রেরিত পত্রের প্রদত্ত শর্তপূরণকল্পে — পূজা আয়োজনের ফলে কলাবাগান মাঠ কিংবা প্রকল্প এলাকায় কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হলে তার যথার্থ ক্ষতিপূরণ/জরিমানা দেওয়া হবে – এমন নিশ্চয়তা প্রদানপূর্বক কমিটির পক্ষ হতে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে কোনো আবেদনও করা হয়নি।
ছবি- ২০১৯ সালের কলাবাগান মাঠে পূজা আয়োজনের পর ক্ষতিগ্রস্থ মাঠের স্থিরচিত্র।
এখানে উল্লেখ্য যে, কলাবাগান মাঠ ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় ২০১৮ সাল থেকে একটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় কলাবাগান মাঠের উন্নয়ন, মাঠ হতে ধানমন্ডি-৩২ এবং মাঠ হতে ধানমন্ডি হ্রদের পানসি রেস্তোরা পর্যন্ত পথচারীদের হাঁটার পথ (ফুটপাত), মাঠের চারপাশে নর্দমা (ড্রেনেজ) ব্যবস্থা ও হ্রদের পাড়ে হাঁটার পথ (ওয়াক ওয়ে) নির্মাণ, মাঠে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার জন্য সুবিধা সংবলিত অনুষঙ্গ সৃষ্টি এবং অনুশীলনের জন্য জাল (নেট) স্থাপন ইত্যাদি বহুবিধ কর্মযজ্ঞ চলমান।
২০১৮ সালে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার পর ২০১৯ সালে কলাবাগান মাঠে বিশেষ বিবেচনায় মাঠের ক্ষয়ক্ষতি না করা এবং ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হলে তার যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করার শর্তে দুর্গাপূজা আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু দুর্গাপূজার কারণে (ক) মাঠের যে অংশে দুর্গাপূজা আয়োজন করা হয়, মাঠের সেই অংশের ঘাস সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায় (খ) পূজা আয়োজনে খোঁড়াখুঁড়ির ফলে মাঠ ভরাটে ব্যবহৃত বালি সরিয়ে ফেলায় মাটির নিচের থাকা খোয়া বেরিয়ে আসে (গ) মাটির নিচে স্থাপিত Perforled Pipe ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং (ঘ) পুরো মাঠ জুড়ে ময়লা-আবর্জনায় ভরে ওঠে।
সামগ্রিকভাবে সে সময় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হলে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে মর্মে মুচলেকা হলেও বস্তুত কমিটি কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রদান করেনি।
অধিকন্তু ২০১৯ সালের পূজা আয়োজন এবং আয়োজনজনিত কলাবাগান মাঠের ক্ষয়ক্ষতি সাধনের পরেও কোন ধরনের ক্ষতিপূরণ প্রদান না করার পীড়াদায়ক ও রগরগে অভিজ্ঞতা বলে দেয় — কমিটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রশ্নবিদ্ধ দায়িত্বশীলতার ফলে তাদের লিখিত কিংবা মৌখিক মুচলেকা কিংবা অঙ্গীকারনামায় ভরসা রাখা যায় — এমন কোন উপকরণ অবশিষ্ট আছে!
৩) করোনা মহামারির কালো থাবায় বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। বাংলাদেশও এই মহামারির কবল মুক্ত হয়নি। ফলে করোনা মহামারিকালীন পূজা আয়োজনে বিগত ৫ অক্টোবর ধর্ম মন্ত্রণালয় হতে পূজা আয়োজনে যে নির্দেশনা (জরুরি বিজ্ঞপ্তি) প্রদান করা হয়েছে, তাতে মন্দিরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত বিষয়াবলী উল্লেখ করা হয়েছে।
ফলে উন্মুক্ত স্থানে পূজা আয়োজনের বিষয়ে অনুমতি প্রদানে সরকারের তরফ হতে এখন পর্যন্ত কোনো ধরণের শৈথিল্য প্রদান করা হয়নি।
ছবি- ২০১৯ সালের কলাবাগান মাঠে পূজা আয়োজনের পর ক্ষতিগ্রস্থ মাঠের স্থিরচিত্র।
এছাড়াও ইতঃপূর্বে পূজা আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের মধ্য হতে — কলাবাগান মাঠের পরিবর্তে অন্য কোনো স্থানে কিংবা মাঠে পূজা আয়োজনের চেষ্টা করার লক্ষ্যে — দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সহযোগিতা চাইলে সে সময় মেয়র ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে অন্য কোনো স্থান কিংবা মাঠে পূজা আয়োজন করা হলে করপোরেশন তাতে সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন।
কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন এবং হস্তান্তর হওয়ার আগ পর্যন্ত কলাবাগান মাঠে পূজা আয়োজন করার সুযোগ নেই বলে সুস্পষ্টভাবে জানানো হয়।
৪) সংবাদ সম্মেলনে ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগান, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর এলাকায় কোনো মন্দির নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ধরনের বক্তব্য পুরোপুরি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। কারণ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য থাকাকালীন ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ এলাকায় ৮টি মন্দিরের উন্নয়ন ও সংস্কার সম্পন্ন করেছেন।
সুতারাং সংবাদ সম্মেলনে এ ধরনের তথ্য প্রদান করার মাধ্যমে অশুভ কোনো উদ্দেশ্য সাধনের ইঙ্গিত করে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় কতগুলো মন্দির আছে, যারা তা জানেন না বরং তাদের কাছে একমাত্র স্থান হিসেবে কলাবাগান মাঠকে বিবেচনা করার অর্থ – ধর্মের নামে নিজেদের পকেট ভারি করতে ব্যবসায়িক পুঁজি আহরণ এবং চাঁদাবাজির মহোৎসব সম্পাদন বৈ আর কিছু হতে পারে না।
দুর্গাপূজার মতো একটি ধর্মীয় উৎসবকে উপলক্ষ করে যারা মিথ্যাচার করতে পারেন – তাদের উদ্দেশ্য যে ধর্মীয় আরাধনা নয়, সেটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
৫) প্রকল্প চলাকালীন কলাবাগান মাঠে দেশের সংখ্যাগুরু মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রধান ধর্মীয় উৎসব — পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ঈদ জামাত আয়োজনে — কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। বাস্তবতা বিবেচনায় এবং মাঠের ক্ষতি সাধন হতে বিরত থাকার মহত্তম অভিপ্রায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ উক্ত মাঠে সকল ধর্মীয় আয়োজন হতে বিরত থেকেছে, যা অত্যন্ত সাধুবাদ যোগ্য।
বস্তুত সকল ধর্মের প্রতি সমব্যবহার নিশ্চিত করা এবং কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন না করার মাধ্যমে যখন সাংবিধান প্রদত্ত নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হচ্ছে, তখন এ ধরনের উস্কানির পেছনে নানাবিধ রহস্য খেলা করছে বলে প্রতীয়মান।
যারা মন্দিরের সংখ্যা ও অবস্থান জানেন না, তাদের উদ্দেশ্য আর যাই হোক, অন্তত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পাদন করাই একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। ধর্মের নামে এ ধরনের একতরফা মিথ্যাচার, ধর্মীয় বাতাবরণে ধর্মীয় উস্কানি এবং ধর্ম-ব্যবসার সুবিধা লাভের অশুভ পায়তারার বিরুদ্ধে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশা ও ধর্মমতের মানুষের সুদৃঢ় অবস্থানকে ত্বরাণ্বিত করবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
চলমান এই উন্নয়ন প্রকল্প এ বছরের ডিসেম্বর মাসে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এবং সে মোতাবেক উন্নয়ন কার্যক্রম পুরোদমে চলমান। চলমান প্রকল্পের আওতায় কলাবাগান মাঠ সংলগ্ন শিশুদের ‘কিডস জোন’ এর উন্নয়ন করা হচ্ছে। সেখানে ২৯টি রাইড স্থাপন করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে কলাবাগান মাঠের পাশাপাশি কিডস জোনটিকে ‘শহীদ শেখ রাসেল শিশু পার্ক’ নামে উদ্বোধন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জোরালো অবস্থানকে” চ্যালেঞ্জ জানানো মানে ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানোর নামান্তর। এ ধরনের কার্যক্রম কাম্য হতে পারে না।
# প্রেস বিজ্ঞপ্তি ।