দূরবীন নিউজ প্রতিবেদক :
পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণার পরও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা খুলনা, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, নড়াইল ও ফরিদপুরে বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর ) সকালে খুলনা থেকে ঢাকাসহ স্থানীয় ১৮টি রুটে কোনো বাস চলাচল করছে না। একইভাবে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও মাহেন্দ্র চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এরআগে বুধবার দিবাগত রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে বৈঠকের পর বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। কিন্তু এর পরও পরিবহন শ্রমিকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে বাধা দিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
খুলনার মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী নুরুল ইসলাম বেবীসহ শ্রমিক নেতারা ফেডারেশনের সভায় অংশ নিতে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি জানান, এবার ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কোনো ধর্মঘট করা হয়নি। আজ সকালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনায় বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। সাধারণ শ্রমিকরা নিজেরা কর্মবিরতি করছেন। তারা কাজ শুরু না করলে কোনো করণীয় নেই। এ ব্যাপারে ফেডারেশনের বৈঠক শেষে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান।
খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গাফফার বিশ্বাস জানান, শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করেছিল। তা আজও অব্যাহত রয়েছে। খুলনা অঞ্চলে কোথাও বাস, ট্রাক, কার্ভাডভ্যান, মাহেন্দ্র ও সিএনজি চলাচল করছে না।
সোনাডাঙ্গা থানার ডিউটি অফিসার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রফিক জানান, বৃহস্পতিবার সকালে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস-ট্রাক ছেড়ে যায়নি।
এদিকে কর্মবিরতির পক্ষে মানিকতলা এলাকার খুলনা-যশোর সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করছে শ্রমিকরা। সেখানে দেখা যায়, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবিতে বিভিন্নভাবে ঘৃণা প্রকাশ করছে তারা। এদিকে সড়কে ইজিবাইক চলাচল করতে চাইলেও বাধা দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
কুষ্টিয়ার সব সড়কে বাস, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ও পণ্য পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে বৃহস্পতিবারও। পরিবহন চালক ও শ্রমিকরা বলছেন, শ্রমিক সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তে বৃহস্পতিবার থেকে পরিবহন চলাচলের কথা থাকলেও সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ও পাঁচ বছর জেলের বিষয়ে কোনো সমাধান না হওয়ায় তারা কর্মবিরতি পালন করছে। পরিবহন শ্রমিকদের স্বার্থপরিপন্থী আইন এর ধারা ও উপধারা সংশোধন না করা পর্যন্ত গাড়ি চালাবেন না বলেও জানান শ্রমিকরা।
কুষ্টিয়া বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন জানান, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে কুষ্টিয়ায় চালক ও শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করার কথা বললেও তারা আমাদের মতো নেতাদের কথা মানছে না। শ্রমিকরা তাদের নিজের সিদ্ধান্তেই কর্মবিরতি পালন করছে বলেও জানান এই শ্রমিক নেতা।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পরিবহন চলাচল শুরু হচ্ছে টেলিভিশনে এমন সংবাদ দেখে অনেক যাত্রীই মজমপুর বাসস্ট্যান্ডে এসে পরিবহন চলাচল বন্ধ দেখে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। যাত্রীরা বলছেন, আর ধর্মঘট নয়, এই পরিবহন সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান তারা।
নতুন সড়ক পরিবহন আইনকে শ্রমিকদের স্বার্থপরিপন্থী আইন উল্লেখ করে এর ধারা ও উপধারা সংশোধনের দাবিতে গত রোববার থেকে কুষ্টিয়ায় পরিবহন শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন শুরু করে।
সড়ক পরিবহন আইনের সংস্কারের দাবিতে ফরিদপুরের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ সারা দেশের পরিবহনগুলো বন্ধ রেখেছে জেলার সড়ক পরিবহন শ্রমিকেরা। আজ সকাল থেকে ছেড়ে যাওয়া সব রুটের যাত্রীবাহী বাস বন্ধ করে দিয়েছে তারা। সরকার শ্রমিকদের দাবির সাথে একমত না হলে তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আর পরিবহন চালাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে।
বুধবার দিবাগত রাতে এই সিদ্ধান্ত আসার পর থেকে শ্রমিকেরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাস টার্মিনালে অবস্থান নিয়েছে। এ সময় তারা অটোটেম্পু ও মাহেন্দ্র ছাড়া কোনো ধরনের পরিবহন চলতে দিচ্ছে না। তারা জানিয়েছে, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আর পরিবহন চালাবেন না।
এদিকে পরিবহন বন্ধ হওয়ার পর থেকে যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়। তারা বাসস্ট্যান্ডে এসে বাস না পেয়ে কেউ টিকেটের টাকা ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে মাহেন্দ্র ও অটোতে গন্তব্য যাওয়ার চেষ্টা করছেন ভেঙে ভেঙে।
কোনো ঘোষণা ছাড়াই চতুর্থ দিনের মতো বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে নড়াইল-যশোর, খুলনা, নড়াইল-লোহাগড়াসহ অভ্যন্তরীণ সব রুটে । গত রোববার সন্ধ্যা থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন শ্রমিকরা। পূর্ব ঘোষণা ছাড়া বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বৃহস্পতিবার সকালে জানান, বাস ধর্মঘট অব্যাহত আছে। আমরা এখন ঢাকায় আছি। দুপুর নাগাদ বৈঠকে বসব। সিদ্ধান্ত পরে জানাব।
একই অবস্থা, মোংলা-খুলনা, মোংলা-রুপসা ও মোংলা-বাগেরহাটসহ আশপাশের সব রুটে। গত কয়েক দিনের মতো বৃহস্পতিবারও বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন বন্দর ব্যবসায়ী ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীসহ যাত্রী সাধারণ।
গত ১ নভেম্বর নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করে সরকার। তবে নতুন আইনে মামলা ও শাস্তি দেওয়ার কার্যক্রম মৌখিকভাবে দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। #