নিজস্ব প্রতিনিধি:
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ইতিহাসে এবারই প্রথম কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অত্যন্ত ক্লিন ইমেজের ভালমনের মানুষ সাবেক সচিব মোছা. আছিয়া খাতুন। নারীদের ক্ষমতায়নে মহতি উদ্যোগে সরকার দুদকের ইতিহাসে প্রথম একজন যোগ্য নারীকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আছিয়া খাতুন সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিব থাকা অবস্থায় ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি অবসরে যান।
গত মঙ্গলবার (১৩ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তাকে দুদক কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদিকে দুদকের বর্তমান কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান আগামী ১ জুলাই অবসরে যাবেন। নতুন কমিশনার মোছা. আছিয়া খাতুন তার স্থলাভিষিক্ত হবেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চুয়াডাঙ্গার দর্শনার মেয়ে আছিয়া খাতুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। তিনি এম.কম (হিসাব বিজ্ঞান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং কৃতিত্বের স্বাক্ষর হিসেবে ‘মন্নুজান হল কৃতি ছাত্রী’ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি নেদারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে একাধিক ডিগ্রি অর্জন করেছেন বলে জানা গেছে।
দুদক আইন অনুযায়ী, তিন জন কমিশনারের সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হয়। তাদের মধ্য থেকে একজন হন চেয়ারম্যান। বাকি দুই জন অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যাদের মেয়াদ হয় পাঁচ বছর। দুদকের বর্তমান কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান আগামী ১ জুলাই অবসরে যাবেন। আছিয়া খাতুন তার স্থলাভিষিক্ত হবেন বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, মোছা. আছিয়া খাতুন ১৯৬৩ সালে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা শহরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত ও এক মেয়ে সন্তানের জননী। তার স্বামীও সরকারের সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তা ছিলেন।
ছাত্রজীবনে আছিয়া খাতুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম.কম (হিসাব বিজ্ঞান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং কৃতিত্বের স্বাক্ষর হিসেবে ‘মন্নুজান হল কৃতি ছাত্রী’ পুরস্কার লাভ করেন। তিনি পরে দ্য ইন্সটিটিউট অব সোশ্যাল স্টাডিজ, দ্য নেদারল্যান্ডস থেকে উইমেন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর থেকে ‘পাবলিক পলিসি’-তে মাস্টার্স ডিগ্রি এবং নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর থেকে এম.বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) ¯েøান বিজনেজ স্কুল থেকে অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট কোর্স সম্পন্ন করেন।
আছিয়া খাতুন ১৯৯১ সালের ২৬ জানুয়ারি বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সদস্য হিসেবে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, চট্টগ্রামে যোগদান করেন। পরে তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নোয়াখালী ও খুলনাতে সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ভ‚মি মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে ও উপ-সচিব থাকাকালীন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির পরিচালক পদে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশের বাইরে সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়ে কাউন্সেলর পদেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব ও অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির মেম্বার ডিরেকটিং স্টাফ (এমডিএস) পদে কর্মরত ছিলেন। ২০২০ সালের ৭ জুন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিব পদে যোগদান করেন আছিয়া খাতুন।
সরকারি কাজে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তিনি ২৯ বছর বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয় এবং মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব, উপ-সচিব এবং সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়াও তিনি পাবলিক পলিসি, লিডারশিপ, নেগোশিয়েশন অ্যান্ড কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং উইমেন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ের একজন প্রশিক্ষক এবং বাংলাদেশে স্বীকৃত প্রশিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ট্রেনিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জীবন-সদস্য। কর্মজীবনে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, দ্য নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবার্গ, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইতালি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, গ্রিস, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন বলে জানা গেছে। # কাশেম