বিশেষ প্রতিনিধি:
বহুল আলোচিত ও সমালোচিত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের চাকরি পুনর্বহালের আবেদনের রিট অনন্তকাল ফেলে রাখা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (১১ এপ্রিল) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টে দ্বৈত বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। রিটের শুনানিতে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতকে জানান, চাকরি পুনর্বহাল চেয়ে শরীফ উদ্দিনের একটি আবেদন দুদকে পেন্ডিং আছে। এ অবস্থায় একই বিষয়ে হাইকোর্টে রিট শুনানি চলতে পারে না।
তখন আদালত দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনারা শরীফ উদ্দিনের আবেদন নিষ্পত্তি করুন। আমরা এই রিট শুনানি ১৯ মে পর্যন্ত মুলতবি রাখছি’। ‘তবে চাকরি পুনর্বহাল চেয়ে মো.শরীফ উদ্দিনের আবেদন অনন্তকাল ফেলে রাখা যাবে না’।
আদালতে শরীফ উদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন দোলন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ চাকরি ফেরত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন বরখাস্ত হওয়া দুদকের আলোচিত ও সমালোচিত উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় শরীফের পক্ষে ব্যারিস্টার মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক এ রিট দায়ের করেছেন। গত ১৬ ফেব্রæয়ারি দুদক উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ স¦াক্ষরে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে শুধুমাত্র ৩ মাসের বেতন দিয়ে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪ (২) তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো। তিনি বিধি অনুযায়ী ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা (যদি থাকে) পাবেন। কমিশনের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো।
এরআগে দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে কর্মরত থাকাকালে বেশকিছু বড় দুর্নীতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মো. শরীফ উদ্দিন। এরপরই একাধিক মহলের রোষানলে পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে।
সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি পরিবারসহ হত্যার হুমকি পান শরীফ। পরিবারসহ হত্যার হুমকি পাওয়ায় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আইয়ুুব খান চৌধুরী ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে সিসি টিভির ফুটেজসহ চট্টগ্রামের খুলশী থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন।
এদিকে ফেব্রæয়ারি তৃতীয় সপ্তাহে দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে ব্রিফিংকালে বলেন, চট্টগ্রামে কর্মরত অবস্থায় ডিএডি শরিফ উদ্দিন অনেক বড় ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। অবৈধ ভাবে ক্ষমতার অপর ব্যবহার এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাক অ্যাকাউন্ট জব্ধ করেছেন।
আদালতের এবং কমিশনের অনুমতি ছাড়াই শরিফ উদ্দিন নিজের ক্ষমতায় ৩৩ টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্ধ করেছেন।এছাড়াও চাকরি নিয়মনীতি অমান্য করে তার আপন ভাইকে দিয়ে অফিসের ডটা অ্যান্টির কার করিয়েছেন। আরেক আত্মীয়কে গাড়ি চালক পদে চাকিরতে নিয়োগ করেছেন। তাকে বদলি করার পরও তিনি কমিশনের আদেশ অমান্য করেছেন। তার বিরুদ্ধে নানা বিতর্কিত কাজে জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ রয়েছে কমিশনের কাছে। তাকে অপসারণের পর থেকে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। যা এখনো চলমান রয়েছে। #