দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
দেশের বহুল আলোচিত দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তলবি নোটিশে কর্মকর্তাদের সামনে হাজির হয়েছেন গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। মঙ্গলবার (৬ জুন) সকাল ১০টা ২৭ মিনিট থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে জাহাঙ্গীর আলমকে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ সম্পদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান।
এদিকে দুদক কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন,তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, দুদক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও মিথ্যা ও বানোয়াট গল্প সাজিয়ে অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। কে বা কারা এসব অভিযোগ/ চিঠি পাঠিয়েছেন তাদের কোনো হদিস নেই। অভিযোগকারীদের ঠিকানার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তার বিরুদ্ধে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের গল্প সাজানো হয়েছে। অথচ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় সরকার থেকে মাত্র ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার কাজ দিয়েছে। আর ওইসব কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার স্থলে কাগজে লিখে দিয়েছে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ। কে বা কারা লিখেছে এর কোনো ডকুমন্টে নেই।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুদক কর্মকর্তারা তাকে এসব বিষয়ে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছে। দুদক বলেছে তারা এ অভিযোগগুলো পেয়েছে। দুদক কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করছে। দীর্ঘ সময়ধরে দুদক কর্মকর্তাদের নানা প্রশ্নের জবাব লিখিতভাবে দিয়েছেন তিনি। কারণ এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
তিনি বলেন, সর্বশেষ তার নামে একটি ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেখানো হয়েছে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুললে মেয়র এবং সিইওর যৌথ সিগনেচার লাগে। জাহাঙ্গীর বলেন,‘ আমার সিগনেচার বাংলাদেশের মধ্যে গোপনীয়তার কিছু নেই। ছাত্রজীবন থেকে এখন পর্যন্ত সর্বশেষ কর্মস্থল, আমার পাসপোর্ট, এনআইডি কার্ড ও সিটি করপোরেশেনে প্রত্যেকটি জায়গায় আমার সিগনেচার আছে। সিগনেচার ব্যতিক্রম রেখে আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দেখানো হয়েছে। আমি বলেছি, ন্যায়বিচারের স্বার্থে ব্যাংকে কে বা কারা ভুয়া সিগনেচার দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলেছে সেটির বিচার আমিও চাই।’
সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আজ আমি দুদকে কয়েকশ সিগেনেচার দিয়েছি। আমি বলেছি আমার যেসব সিগনেচার আছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হোক। প্রয়োজনে ফরেনসিক করা হোক। আমার মতো যেন বাংলাদেশের কেউ হয়রানির শিকার না হয়।’ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি যে জনগণের জন্য কাজ করেছি সেটা পরীক্ষিত। গাজীপুরে আমি তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছি, গাজীপুরের মানুষ আমাকে যেমন স্মরণ করেছে, আমার মাকেও সেখানে ভোট দিয়ে জায়গাটা পবিত্র রেখেছে।’
উল্লেখ্য, গাজীপুর সিটির আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎসহ ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করেছেন।
অপর অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ও কতিপয় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ।২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বহিষ্কার করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ওই প্রজ্ঞাপনে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ভুয়া দরপত্র, নির্দিষ্ট কোম্পানিকে দর দেওয়ার অনুরোধ সংক্রান্ত (আরএফকিউ) দরপত্রে অনিয়ম, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষ্যে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ও একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতিবছর হাটবাজার ইজারার টাকা যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এছাড়া ভ‚মি দখল ও ক্ষতিপূরণ ছাড়া রাস্তা প্রশস্তকরণ সংক্রান্ত অভিযোগও রয়েছে।
প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ঢাকা আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ২৩ মে তলবি নোটিশ পাঠায় দুদক। তলবি চিঠিতে তাকে ৬ ও ৭ জুন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভুয়া ব্যাংক হিসাবে টাকা অবৈধ লেনদেন, বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে পাঠানো নোটিশে ২১ ও ২২ মে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছিল। দুদকের উপ-পরিচালক আলী আকবরের নেতৃত্বে দুটি আলাদা অনুসন্ধান টিম জাহাঙ্গীর আলমকে তলব করেছে। দুই টিমের অপর দুই সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আলিয়াজ হোসেন ও মো. আশিকুর রহমান।
এর আগে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের কিছু বিতর্কিত মন্তব্য সংবলিত ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীর আলমকে শোকজ করা হয়েছিল।#