আবুল কাশেম, দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরে কর্মরত স্কেলভুক্ত মাস্টার রোল কর্মচারীদের খালি হাতে বিদায়য়ের ঘটনা বেড়েই চলছে। চাকরি জীবনের বৃদ্ধ অবস্থায় ৫৯ বছরের বয়সে আজখালি হাতে বিদায়ের নোটিশ পেয়ে অনেকেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। তাদের কান্না দেখার যেন কেউ নেই।
ইতোমধ্যে দুই দফায় ১৭ জন গরীব ও অসহায় কর্মচারীরাকে খালিহাতে বিদায়ের চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরো অর্ধশতাদিক স্কেলভুক্ত মাস্টার রোলের কর্মচারীকে একই কায়দায় বিদায়ের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা যায়।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মাষ্টার রোলের এই এসব কর্মচারীরা চাকরির সামান্য বেতন ভাতার ওপরই এতোদিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনো রকম জীবন যাপন করে আসছেন। কিন্তু হঠাৎ খালি হাতে বিদায়ের অফিস আদেশের নোটিশ পেয়ে কর্মচারীদের পরিবারে আহাজারি শুরু হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে রাস্তায় ভিক্ষা করা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় নেই। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কে দেবেন তাদের সংসার চালানোর খরচের টাকার যোগান। অথচ মাস্টার রোলের এসব কর্মচারী জীবন যৌবন কাটিয়ে দিয়েছেন নগরবাসীর সেবায়। কিন্তু আইনের নানা ফাঁক ফোঁকড়ে তাদেরকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা সমালোচনার পাশাপাশি প্রচন্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে ডিএসসিসিতে।
গত ১৬ জুলাই ডিএসসিসি’র সচিব আকরামুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ৫জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও দুইজন মালীকে চাকরির বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় কর্মচ্যুত করা ।অফিস আদেশে বলা হয়, যাদেরকে কর্মচ্যুত করা হয়েছে তাঁরা কর্পোরেশনে মাস্টাররোলে (কাজ করলে মজুরি, না করলে নেই) কাজ করতেন। এসব কর্মীদের বয়স ইতোমধ্যে ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় তাদেরকে কর্মচ্যুত করা হলো। দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কর্মরত ছিলেন , বিদায় তারা কর্পোরেশন বিধিমালা মোতাবেক কোন ধরণের আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হবেন না।কর্মচ্যুত ৭ হলেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী শ্রী মতি উমা রানী, আব্দুল হক, হারেজ আলী, আজমেরী বেগম, মুর্তজা বেগম এবং মালী সিরাজ বেপারী ও সাইদুর রহমান।
গত ২৩ জুলাই ডিএসসিসি’র সচিব আকরামুজ্জামান স্বাক্ষরিত আরেক অফিস আদেশে সম্পত্তি বিভাগে কর্মরত স্কেলভুক্ত মাষ্টাররোলের আরো ১০জন কর্মচারীকে কর্মচ্যূত করা হয়েছে।
এই ১০ জন হলেন; মো. মোন্তাজ, মো. আনা মিয়া, মো. আওলাদ হোসেন, এইচ এম জাকির হোসেন, মো. লাল মিয়া, জান শরীফ, মো. আনিস, মো. শাহজাহান মৃধা , মো. দেলোয়ার হোসেন ও মো. তমিজ উদ্দিন।
এদিকে গত ১৯ জুলাই ডিএসসিসির পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সংগঠন ‘ স্ক্যাভেঞ্জার এন্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের’ সভাপতি এম এ গনি ও সাধারণ সম্পাদক মো. আ. লতিফ ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়া পরিচ্ছন্নতা কর্মীদেরকে ১০ লাখ টাকা অনুদানসহ পোষ্যদের চাকরি দেওয়ার জন্য মেয়রের বরাবর আবেদন জানিয়েছেন।
তারা আদেনে উল্লেখ করেছেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়া পরিচ্ছন্নতা কর্মী / মাষ্টার রোলের কর্মচারী এককালীন ৪ লাখ টাকা অনুদানসহ পোষ্যদের চাকরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই কর্মচারীরা জীবন যৌবন কাটিয়ে দিয়েছেন সিটি করপোরেশনে নগরবাসীর সেবায় শ্রম দিয়েছেন। আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাদের সারাজীবনের শ্রমের প্রতিকী মূল্য হিসেবে ১০ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করতে মেয়রের কাছে মানবিক আবেদন জানানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, ২০১৩ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর ডিএসসিসির তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনছার আলী খানের স্বাক্ষরে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে স্কেলভুক্ত মাষ্টার কর্মচারীদের সুযোগ সুবিধার বিষয়ে সুপারিশমালাসহ একটি প্রতিবেদন পাঠান। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৭ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশনে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরত দৈনিক মজুরি ভিত্তিক ৮৭৪ জনকে কর্মচারীকে স্কেলভুক্ত মাষ্টাররোলে উর্ন্নীত করা হয়। মহিলা কর্মচারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং ভাতা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
এরপর ২০১৩ সালে ৫ নভেম্বর এলজিআরডি মন্ত্রণালয় থেকে আরো সুনিদিষ্ট প্রস্তাব চেয়ে ডিএসসিসিকে চিঠি দেওয়া হয়। এই চিঠি পেয়ে ২০১৪ সালে ২৭ মে, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনছার আলী খান স্কেলভুক্ত মাষ্টাররোল কর্মচারীরা ৫৯ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ কিংবা কর্মরত অবস্থায় মৃত্যূবরণ করলে তাদের ওয়ারিশগনকে এককালীন ৫ লাখ টাকা করে অনুদান প্রদান করা যেতে পার। স্কেলভুক্ত মাষ্টাররোল কর্মচারীদের পক্ষে আরো বেশ কিছু সুপারিশমালা সহ প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।
এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব সরোজ কুমার নাথের স্বাক্ষরে ২০১৪ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর ডিএসসিসিকে পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করেছেন,’ ১৯৮৫/১৯৮৬ চাকরি কাঠামোতে স্কেলভুক্ত মাষ্টাররোলে শ্রমিক নিয়োগের বিধান ছিল এবং চাকরির কাঠামোর আওতায় নিয়োজিত শ্রমিকগণ অন্যান্য সাধারণ কর্মচারীর ন্যায় স্বাভাবিক কর্মস্থল বয়স ৫৭/৫৯ বছর পূর্তির মেয়াদ পাবেন এবং অবসর সুবিধাদি পাবেন।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আনিসুল হকের আমলে এবং তার সভাপতিত্বে ২০১৭ সালে ১৯ মে, ১৫তম করপোরেশন সভায় স্কেলভুক্ত মাষ্টারোল কর্মচারীদের ৫৯ বছর পূর্ণ হলে এককালীন ৪ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া এবং পোষ্যদের চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরপর ঢাকা উত্তর সিটির এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ফলে একই আইনে ঢাকা দুই সিটির যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে স্কেলভুক্ত মাষ্টাররোলের কর্মচারীদের বিষয়টি নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়ে নানা প্রশ্নের উদ্বেগ হচ্ছে। # কাশেম