দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
দেশের বহুল ঘটনা ডেসটিনির সাধারণ গ্রাহকদের মিথ্যে প্রলোভনে ফেলে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় আসামীদের বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা বৃদ্ধির জন্য হাইকোর্টে আবেদন করবে দুদক।
বিচারিক বিশেষ জজ আদালত ডেসটিনি গ্রæপের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার রায় দিয়েছেন। তবে একমাত্র ডেসটিনি গ্রæপের এমডি রফিকুল আমীনকে সর্বোচ্চ ১২ বছর কারাদন্ড দেওয়া হয়। আর ডসটিনি গ্রæপের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদ ৪ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয় এবং বাকী ৪৪ জনকেও বিভিন্ন মেয়াদের অত্যন্ত (সাজার) কারাদন্ড দেওয়া হয়।
এদিকে ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান শনিবার (১১ জুন) ডেসটিনি গ্রæপের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে সাজা বৃদ্ধির জন্য হাইকোর্টে আবেদন করার সিদ্ধান্তের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ডেসটিনির চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদসহ ৪৫ আসামীর সাজার বাড়ানোর আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। রোববার (১২ জুন) সকালে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন একটি দ্বৈত বেে এ আবেদন দাখিল করা হবে।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ডেসটিনি গ্রæপের হারুন-অর-রশিদ এবং রফিকুল আমিনসহ আসামীরা সংঘবদ্ধভাবে অপরাধ করেছেন। অথচ শুধু একজনকে (রফিকুল আমীন) সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৪৫ জনকে কম সাজা দেওয়া হয়েছে। তাই সবার সাজা বাড়াতে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
গত ১২ মে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের দায়ে ডেসটিনি গ্রæপের এমডি রফিকুল আমীনকে ১২ বছর কারাদন্ড দেওয়া হয়। কিন্তু একই মামলায় কোম্পানির চেয়ারম্যান ও সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদকে চার বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের’ কথা বিবেচনায় নিয়ে আদালত তার সাজা কমিয়ে দেন বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায়ে ৪৫ আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করেছেন। ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির প্রায় ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই কলাবাগান থানায় মামলা করে দুদক। ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট অভিযোগ গঠন করে আদালত আসামিদের বিচার শুরুর আদেশ দেন।
২০০০ সালে ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড নামে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি দিয়ে এ গ্রæপের যাত্রা শুরু। পরের বছরে বিমান পরিবহন, আবাসন, মিডিয়া, পাটকল, কোল্ড স্টোরেজ, বনায়নসহ বিভিন্ন খাতে ৩৪টি কোম্পানিতে ডেসটিনির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়। পরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে এ কোম্পানির বিরুদ্ধে।
এর মধ্যে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভের নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা সংগ্রহ করে ডেসটিনি। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। তাতে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন। আইন অনুযায়ী অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের সর্বোচ্চ শাস্তি ১২ বছরের কারাদন্ড। ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীনকে সর্বোচ্চ দন্ড দেন বিচারিক আদালত। পাশাপাশি তাকে ২০০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে রায়ে।
অপরদিকে ডেসটিনি গ্রæপের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশীদকে মাত্র ৪ বছরের কারাদন্ড এবং সাড়ে ৩ কোটি টাকার অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। চার বছরের দন্ড এ আইনে সর্বনিম্ন সাজা। হারুনকে কম সাজা দেওয়ার ব্যাখ্যায় বিচারক তার রায়ে উল্লেখ করেছেন, হারুন-অর-রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের কারণে তাকে সর্বনিম্ন দন্ডে দন্ডিত করা হলো। হারুনের অবরুদ্ধ সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাবে অবমুক্ত (রিলিজ) করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে। তবে জরিমানার ৩ কোটি প াশ লাখ টাকা তাকে পরিশোধ করতে হবে। #