নিজস্ব প্রতিবেদক:
ডিএনসিসিতে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় রাজধানীর কাওরান বাজারে জাহাঙ্গীর টাওয়ার, বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা), যমুনা অয়েলের নির্মাণাধীন ভবন, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনকে ৫ লাখ টাকা করে ৫ মামলায় মোট ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের অভিযানে আরও ১১ মামলায় ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অর্থাৎ ১৬ মামলায় ২৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এছাড়াও ৩টি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়।
সোমবার (১০ জুলাই) দুপুরে ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে কারওয়ান বাজারে সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ঝটিকা অভিযানে গিয়ে মরণব্যাধি ডেঙ্গুজ্বরের জীবানুবাহি ভংঙ্কর কীট এডিস এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ওই ৫ প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ টাকা করে মোট ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেঃ জেনাঃ এ.কে.এম শফিকুর রহমান, অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মোতাকাব্বীর আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডিএনসিসির চলমান অভিযানের তৃতীয় দিনে মেয়র আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক, অত্যন্ত হতাশার। সরকারি প্রতিষ্ঠান নির্দেশ মানছে না। আমাদের মন্ত্রণালয়ে মিটিং হয়। আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিং হয়। একাধিকবার মিটিং হয়েছে। আমরা সবাই কিন্তু বলেছি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করবো। কিন্তু বাস্তবে কেউ দায়িত্ব পালন করছেন না।’
তিনি বলেন, ‘মশক নিধন অভিযানে আমি/আমরা কোথায় যাব, এ বিষয়ে কাউকে কিছুই জানাব না। আগে থেকে জানিয়ে গেলে সেখানে সবকিছু পরিষ্কার করা থাকে। তাই প্রকৃত অবস্থা দেখতে কাউকে না জানিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে আকস্মিক পরিদর্শনে যাব। এক্ষেত্রে আমি কাউকে বিশ্বাস করি না। যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাব এবং ব্যবস্থা নেব।’
ডিএনসিসির মেয়র গণমাধ্যমকে আরও জানান, ঝটিকা অভিযানে এসে প্রথমে জাহাঙ্গীর টাওয়ার,পেট্রোবাংলা, যমুনা অয়েলের নির্মাণাধীন ভবন, টিসিবি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনকে ৫ লাখ টাকা করে ৫ মামলায় মোট ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জাহাঙ্গীর টাওয়ারের বেজমেন্টের কর্মচারীদের অফিস তালাবদ্ধ করে সংশ্লিষ্ট মালিক পক্ষকে সাক্ষাতের নির্দেশনা দিয়েছে ডিএনসিসির কর্মকর্তারা।
এরপর মেয়র আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিদর্শন দল পেট্রো বাংলা ভবনের বেজমেন্টে প্রবেশ করে। সেখানে বিøচিং পাউডার ছিটানো দেখা গেলেও পরীক্ষায় ড্রেনের পানিতে এডিস মশা লার্ভা মেলে। এজন্য পেট্রো বাংলাকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার নির্দেশনা দেন ডিএনসিসি অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মোতাকাব্বীর আহমেদ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার। তিনি সংবাদকর্মীদের সামনে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আরও ১০ থেকে ১২ দিন আগে তিনি এডিস মশা বিরোধী কার্যক্রমের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরও ডিএনসিসির অভিযানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আগস্ট মাসে ঢাকার পরিস্থিতি আরো ভয়ানক অবস্থা সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। আমরা গত রোববার জরিমানা করেছি প্রায় ৯ লাখ টাকা। তার আগের দিন জরিমানা করা হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ টাকা। অভিযান চলছে, চলবে। আমার অনুরোধ আপনারা জরিমানা না দিয়ে পরিষ্কার রাখুন নিজ নিজ অঙ্গন। আমরা যেখানেই এডিস মশার লার্ভা পাবো সেখানে জরিমানা করবো।
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গত পরশু দিন আমরা রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জাপান গার্ডেন সিটিতে অভিযান পরিচালনা করেছি, সেখানকার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। সেখানে ২৭টা বিল্ডিংয়ের নিচে অভিযানে দেখেছি এডিস মশার লার্ভার চাষ হচ্ছে। আজকে আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে এসে দেখলাম এডিস মশার চাষ হচ্ছে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে যেখানে গাড়ি রাখে, সেখানে ড্রেনে পানি। সেখানে মশার চাষ হচ্ছে।’
ভবনের ভিতরে বেজমেন্ট পরিষ্কার করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের নয় উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা রাস্তা, ড্রেন, ফুটপাত এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করছে। কিন্তু অফিসের, মার্কেটের, ও বাড়ির বেজমেন্ট পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব ভবন মালিক বা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।’
এসময় ডিএনসিসি মেয়র অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, বাসা-বাড়ি, আমরা নিজ নিজ অঙ্গন পরিষ্কার রাখি। আমরা কিছুদিন ধরে দেখছি কী ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আমরা টেলিভিশন পত্রিকা অনলাইন খুললে ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা জানতে পারছি। সবার সচেতনতা অত্যন্ত জরুরী।’ # কাশেম