আবুল কাশেম, দূরবীণ নিউজ:
নিয়মিত বেতন ভাতা দিতে না পারলেও মাষ্টার রোল কর্মচারী এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের চাকরি চ্যূতির পাশাপাশি এবার নগর ভবনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংগঠন স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের অফিসে তালা মেরেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সচিব ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপসের আমলে ডিএসসিসিতে ‘টপ টু বটম’ কর্মকর্তা ও কর্মচারী আজ চাকরি হারানো এবং মান সম্মান রক্ষার বিষয়টি নিয়ে মারাত্মক আতঙ্কে রয়েছেন। গড়ে প্রতি সপ্তাহে দৈনিক মুজুরি ভিত্তিক ২০ জনের মতো মাষ্টাররোল কর্মচারীকে ৫৯ বছর বয়সে শূন্যহাতে চাকরি থেকে বিদায় করা হচ্ছে।
এপর্যন্ত ৫৯ বছর বয়সে দেখিয়ে প্রায় দুই শত মাষ্টাররোল কর্মচারীকে শূন্যহাতে বিদায় করা হয়েছে। আরো কয়েক শত কর্মচারী ৫৯ বছর বয়সে শূন্যহাতে চাকরি থেকে এই বছরই বিদায় নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
এই কর্মচারীরা জীবন যৌবন ডিএসসিসিতে চাকরি করতে এসে নগরবাসী সেবা করে যাচ্ছন। আজ এসব নিরীহ কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কান্না শোনার মতো কেউ নেই।
অথচ ঢাকা উত্তর সিটিতে ৫৯ বছর বয়সে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক মাষ্টাররোল কর্মচারীদের ৪ লাখ টাকার চেক হাতে দিয়ে সুন্দরভাবে বিদায় করা হচ্ছে। শুধু তাইনয়, ওইসব কর্মচারীদের পৌষ্যদের যোগ্যতা অনুযায়ী চারকি দেওয়ার বিষয়ে মেয়র আতিকুল ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে সংস্থাটির সচিব আকরামুজ্জামানের উপস্থিতিতে স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের অফিসে তালা লাগানো হয়েছে।
মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপসের নির্দেশনার আলোকে অসহায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা প্রচন্ড শীতেরও রাতে নগরীতে রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া এবং ময়লা আর্বজনা পরিস্কার করে যাচ্ছেন। অথচ তারা নিয়মিত মাসের সামন্য বেতনটা পর্যন্ত সময় মতো পাচ্ছেন না।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অভিযোগ, তারা নিয়মিত ডিউটি করেন অথচ নিয়মিত বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে না। তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কবে নাগাদ বেতন দেয়া হবে সে বিষয়ে খোঁজ নেয়ার জন্যই গত ২৪ জানুয়িারিতারা হিসাব বিভাগে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কাউকে মারধর করেননি। এর মধ্যে মঙ্গলবার সকালে তাদের অফিসে তালা দিয়েছে ডিএসসিসি।
গত রোববার (২৪ জানুয়িারি) ডিএসসিসির হিসাব বিভাগের বেতন পাবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সহকারী মো. আলী হোসেনের সাথে কর্মচারীদের বাকবিতন্ডা হয়। আর এই ঘটনাকে আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী উল্লেখ করে নিরীহ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা।
আরো জানা যায়, গত ২৪ জানুয়ারির ৪জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে ডিএসসিসির সচিব আকরামুজ্জামানের স্বাক্ষরে। এছাড়া এই বাকবিতন্ডায় ইন্ধন দেয়ার অভিযোগে ডিএসসিসির স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি এম এ গনি ও সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল লতিফকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।
নোটিশের জবাব এবং কারণ দশানোর বিষয়টির নিষ্পত্তির আগেই হুট করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংগঠন স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের অফিসে তালা লাগিয়েছেন ডিএসসিসির সচিব।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, নগর ভবনের চতুর্থ তলায় স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের অফিসের পৃথক দুটি ফটকে তালা লাগানো। অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
এর মধ্যে দুজন কর্মী জানান, প্রতি মাসের ২০-২২ তারিখ তাদের বেতন দেয়া হতো। এভাবে সাড়ে তিন হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর (দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে) বেতন বকেয়া পড়ে। সে কারণে তারা হিসাব বিভাগে গিয়ে যোগাযোগ করলে সেখানে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়। এ কারণে চারজন কর্মীকে কর্মচ্যুত করা হয়েছে।
এদিকে ডিএসসিসিতে মশক নিধন কাজে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে কর্মরতরা কয়েক মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ জানুয়ারি তারা সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব দফতরের সামনে অবস্থান ও বিক্ষোভ করেছিলেন।/