আবুল কাশেম,দূরবীণ নিউজ:
এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু ও মশাবাহিত অন্যান্য রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ১০ দিনের বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে (চিরুনি অভিযান) ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৬টি স্থাপনা পরিদর্শনকালে ৮৮৩টি স্থাপনায় এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। আর ঘটনায় ডিএনসিসির ১০টি মোবাইল কোর্ট ২২ লাখ ৮৩ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায়।
শনিবার (১৪ নভেম্বর) ডিএনসিসির ১০দিনের চিরুনি অভিযান শেষ হয়েছে। গত নভেম্বর ২ থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত এই চিরুনি অভিযান চলে। তবে ঢাকা ১৮ আসনে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন থাকায় ১২ নভেম্বর অঞ্চল ১, অঞ্চল ৬ ও অঞ্চল ৮ এ চিরুনি অভিযান স্থগিত ছিল। ফলে আজ শনিবার এই তিনটি অঞ্চলে চিরুনি অভিযান হয়েছে।
গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এসএম মামুন। তিনি আরো জানান, ডিএনসিসির এ বিশেষ অভিযানে স্বাস্থ্য বিভাগ, বর্জ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেরা অংশ গ্রহণ করেছেন।
চিরুনি অভিযানে মোট ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৬টি স্থাপনা পরিদর্শনকালে ৮৮৩টি স্থাপনায় এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এরমধ্যে মহাখালী এলাকায় (অঞ্চল ৩) সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩৩৫টি স্থাপনায় এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়।
এছাড়া উত্তরায় (অঞ্চল-১) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৪৫টি স্থাপনায় ,কাওরানবাজারে (অঞ্চল-৫) তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৩৯টি স্থাপনায় এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়।
মিরপুর নম্বররে (অঞ্চল ২) ৬০টি স্থাপনায় , মিরপুর ১০ (অঞ্চল ৪) ৬০টি স্থাপনায়, হরিরামপুরে (অঞ্চল ৬) ৬৮টি স্থপনায়, দক্ষিণখানে (অঞ্চল ৭) ৩০টি স্থাপনায়, উত্তরখানে (অঞ্চল ৮) ১১ টি স্থাপনায়, ভাটারায় (অঞ্চল ৯) ৩৯টি স্থাপনায় এবং সাতারকুলে (অঞ্চল ১০) ৬টি স্থাপনায় এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়।
চিরুনি অভিযানে সরেজমিন পরিদর্শনকালে ডিএনসিসির কর্মকর্তারা এডিসের লার্ভা পাওয়া স্থানগুলো শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে স্যাঁতস্যাঁতে মেঝে, পানির মিটার, ফুলের টব, পানির ট্যাংকি, গ্যারেজ, ভাঙ্গা মগ, রঙের কৌটা, ডাবের খোসা, ফেলে দেওয়া দইয়ের পাত্র, প্লাস্টিকের বাটি, পরিত্যক্ত বাসন, দুই বাড়ির মাঝখানের অংশ, পরিত্যক্ত বালতি, নির্মাণাধীন বাড়ি, পানির চৌবাচ্চা, টায়ার, ডোবা ইত্যাদি। এডিসের লার্ভা পাওয়া স্থাপনাগুলোর সামনে “এই বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছে” লেখা স্টিকার লাগানো হয়।
চিরুনি অভিযানে ,৮২ হাজার ৭২টি স্থাপনায় ময়লা-আবর্জনা ও জমে থাকা পানি পাওয়া যায়। এই স্থাপনাগুলোর ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হয় এবং জমে থাকা পানিতে মশার কীটনাশক প্রয়োগ করে জমে থাকা পানি ফেলে দেয়া হয়।
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এডিসের লার্ভা পাওয়ায় এবং অন্যান্য অপরাধে ডিএনসিসির মোবাইল কোর্ট চিরুনি অভিযানকালে মোট ২২ লাখ ৮৩ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এবারের চিরুনি অভিযানে পানি জমে থাকা বিভিন্ন স্থান, জলাশয়, ডোবা, নর্দমায় যুক্তরাজ্য থেকে সদ্য আমদানিকৃত চতুর্থ প্রজন্মের লার্ভিসাইড নোভালিউরন প্রয়োগ করা হয়। এই কীটনাশক যেখানে প্রয়োগ করা হয় সেখানে লার্ভা থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা তৈরি হয় না এবং ৯০ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে।
আরো জানা যায়, উত্তরায় এডিসের লার্ভা পাওয়ায় আঞ্চলিক নিবার্হী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নায়নের নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট ২ লাখ ৯২ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।
মিরপুর-২ অঞ্চলে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এস এম শফিউল আজমের নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট ৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
মহাখালী অঞ্চলে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় আঞ্চলিক নিবার্হী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল বাকীর নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট ৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
মিরপুর-১০ অঞ্চলে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় এ অঞ্চলে নিরীক্ষা কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসির উদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট ৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
কারওয়ান বাজার অঞ্চলে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় এবং অন্যান্য অপরাধের এ অঞ্চলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পারসিয়া সুলতানার নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
হরিরামপুর অঞ্চলে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আব্দুল হামিদ মিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
দক্ষিণখান অঞ্চলে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদের নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
উত্তরখান অঞ্চলে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবেদ আলীর নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট কাউকে জরিমানা করেননি। তবে এডিসের লার্ভা পাওয়া স্থাপনার মালিকদেরকে সতর্ক করে দেওয়া হয়।
ভাটারা অঞ্চলে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় প্রধান ভান্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সগীর হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
সাতারকুল অঞ্চলিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হলেও কোন জরিমানা করা হয়নি। তবে এডিসের লার্ভা পাওয়া স্থাপনার মালিকদেরকে মৌখিক ভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়।
ডিএনসিসিতে চলতি বছরে কয়েক দফায় পরিচালিত চিরুনি অভিযানের এ পর্যন্ত মোট ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৬টি বাড়ি, স্থাপনা ইত্যাদি পরিদর্শনকালে ৪ হাজার ২৬০টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়।আর চিরুনি অভিযান চলাকালে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এ পর্যন্ত মোট ৮১ লাখ ১১০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।# কাশেম