দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
দেশের বহুল আলোচিত স্বাস্থ্য খাতের প্রভাবশালী ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু হাসপাতালে মাস্ক ও পিপিই সরবরাহের নামে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। দুদকের আবেদনে প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে মিঠুর প্রায় ৭৪ কোটি টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জব্দ এবং তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। এর এবার তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সম্প্রতি দুদকের অনুসন্ধানী কর্মকর্তা উপ পরিচালক মো. মশিয়ুর রহমান দেশের বাইরে ছুটে গেছেন মিঠুর পাচারকৃত সম্পদের তথ্য আনার জন্য। কারণ ঠিকাদার মিঠুর নামে- বেনামে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। যারফলে দুদকের পক্ষ থেকে অনুসন্ধানী কর্মকর্তা ওইসব দেশে অবৈধভাবে মিঠুর সি ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য সংগ্রহের জন্য বিদেশ ছুটে গেছেন। দুদকের কর্মকর্তা ওইসব দেশের সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় সঠিক তথ্য পাবার আপ্রাণ চেষ্ঠায় রয়েছেন ।
সূত্র মতে, ভয়বহ জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং বিদেশে পাচারকারী স্বাস্থ্য খাতের প্রভাবশালী ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে শক্তভাবে ধরার জন্য মাঠে নামছে দুদক। কিন্তু তিনি নানা কৌশলে দুদক টিমকে এড়িয়ে চলছেন। দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান ২০২০ সালে ৬ আগস্ট তাকে তলব করেন। কিন্তু তিনি দুদকে হাজির হননি। এরপর আরও কয়েকবার চেষ্ঠা করেও তাকে দুদকে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে গত ১৯ অক্টোবর ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের অনুমোদন নিয়ে ঠিকাদার মিঠুর ১৬ কোটি ৪১ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর এবং ৫৭ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার ২৩৮ টাকা অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৭৩ কোটি ৭৪ লাখ ৭১ হাজার ৭৩৮ টাকার সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করে দুদক। ওই দিন আদালত একইসঙ্গে মিঠুর বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আলতের আদেশে দুদক থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাে র অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শককে চিঠি দেয়। এছাড়া স্থল ও বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে দুদক।
ঠিকাদার মিঠুর অর্জিত সম্পদের আংশিক তুলে ধরা হলো; মিঠুর রাজধানীর বনানী ডিওএইচএস এলাকার রোড-৪/এ-তে ৫ কাঠা জমিতে পাঁচতলা বাড়ি, বানানীর ৬ নম্বর রোডের বøক সিতে ১৮২৫ বর্গফুট ফ্ল্যাট, উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর রোডে ৫.২৫ কাঠা জমিতে চারতলা বাড়ি, একই এলাকার ৫ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর রোডে ছয়তলা বাড়ি, গুলশানের সুবাস্তু নজর ভিলায় ৩৭২৫ ও ৫৮৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও দুটি কার পার্কিং, দক্ষিণ কল্যাণপুরের ১ নম্বর রোডে ১৫৮৩ বর্গফুট ফ্ল্যাট, উত্তরার ১৫সি রোডের ৩ কাঠার দুটি প্লট, টঙ্গী শিল্প এলাকায় দুই বিঘা জমি ও ভবন এবং রংপুরের বুড়িহাট রোডে কয়েক কোটি টাকার বিলাস বহুল বাড়ি। এর বাইরেও ঠিকাদার মিঠুর নামে শেয়ারবাজারে শতকোটি টাকার বিনিয়োগ, সাউথইস্টসহ বিভিন্ন ব্যাংকে শতকোটি টাকা সম্পদের তথ্য রয়েছে দুদকের হাতে। তবে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদের সঠিক তথ্য উদঘাটনের চেষ্ঠায় রয়েছে দুদক।
সূত্র মতে, দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসছে ঠিকাদার মিঠু সিন্ডিকেট করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল মৌলভীবাজার, জেনারেল হাসপাতাল গোপালগঞ্জ, আইএইচটি সিলেট, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা ডেন্টাল হাসপাতাল এবং রাজধানীর সিএমএসডিতে অতি উচ্চমূল্য দেখিয়ে নি¤œমানের মালামাল সরবরাহ, দরপত্রের শর্তানুযায়ী মালামাল সরবরাহ না করা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মালামাল সরবরাহ না করেই বিল উত্তোলন করেন। কইসঙ্গে অপ্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহ করেন। মিঠুর ঢাকার গুলশান, বনানী, উত্তরা, টঙ্গী, কাপাসিয়া ও রংপুরে একাধিক অফিস রয়েছে। আদালতের অনুমোদন নিয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে গণমামকে বলেন, মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়ন কাজের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানের স্বার্থে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। আমাদের গোয়েন্দা শাখার মাধ্যমে জানতে পেরেছি তিনি দেশে অবস্থান করছেন। যেহেতু তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে, এ কারণে আদালতের মাধ্যমে মিঠুর বিদেশ গমন রহিত করা হয়েছে। তার অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি আদালতের মাধ্যমে ক্রোক করা হয়েছে। মিঠুকে গ্রেপ্তার করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, আপাতত তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রদান ও সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা প্রয়োজনে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা নেবেন।
# একে