দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
করোনাভাইরাসের মহামারি থেকে দেশবাসীকে নিরাপদে রাখতে সরকার দেশের সব স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব অফিস , আদালত ও গণপরিবহন বন্ধ করেছে। সরকার শিক্ষার্থীদের পড়া শোনা ডিজিটাল পদ্ধতিতে চালু রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু সরকারের এই মহতি উদ্যোগটি শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারবে কি না তা নিয়ে নানা সংশয় দেখা দিয়েছে। এই ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মনযোগ বাড়ছে না।
স্কুল কলেজ ছুটির সময়ে মাধ্যমিক পর্যায়ের ক্লাস সংসদ টিভিতে সম্প্রচারের উদ্যোগ নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। ক্লাস রেকর্ডিয়ের দক্ষ টেকনিশিয়ানের অভাবে মানসম্পন্ন ক্লাস পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। ফলে টিভিতে এই ক্লাসের প্রতি মনোযোগীও হতে পারছে না অনেকে।
অভিভাবকদের মধ্যেও এই ক্লাসের মান নিয়ে অসন্তোষ ছিল। ফলে সরকারের একটি ভালো উদ্যোগও এখন ব্যর্থ হতে চলেছে।
এ বিষয়ে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো: গোলাম ফারুক চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, টেলিভিশনে শ্রেণী পাঠদানে কিছু সমস্যা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষক, টেকনিশিয়ান ও কর্মকর্তারা আসতে চাচ্ছেন না বলেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ক্লাসগুলো আরো প্রাণবন্ত করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। মনোযোগী হয়ে প্রতিদিন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এসব ক্লাস দেখতে হবে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য টিভিতে ক্লাস করা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) ওয়েবসাইটে শিক্ষকদেরকে শ্রেণী পাঠের ভিডিও ধারণ কার্যক্রমে যুক্ত হতে নিবন্ধন করতে বলা হয়।
সেখানে শতাধিক শিক্ষক নাম নিবন্ধন করলেও ৪০ জন শিক্ষককে নির্বাচন করে ডিপিই। নির্বাচিতদের কাছে রেকর্ডিং করা ভিডিও চাওয়া হলে শিক্ষকরা যেসব ভিডিও পাঠিয়েছেন তা এডিট করে টেলিভিশনে সম্প্রচার করার মতো নয়। শিক্ষকদের দক্ষতা না থাকায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে প্রাথমিকের শ্রেণী পাঠ কার্যক্রম টেলিভিশনে প্রচার করা নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো: শামছুদ্দিন মাসুদ গণমাধ্যমকে জানান, অধিদফতরের ওয়েবসাইটে শিক্ষকরা নিবন্ধন করলেও দক্ষ ও সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করা হয়নি।
যাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে তাদের পাঠানো ভিডিও সম্প্রচার করা যাচ্ছে না। দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সমন্বয়হীনতার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু গণমাধ্যমকে জানান, টিভিতে ক্লাস করার মতো সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের দেশে নেই। অনেকের ঘরে টিভি নেই। আবার সংসদ টিভি ডিশ লাইন ছাড়া দেখা যায় না। এই সুবিধা দেশের সব এলাকায় নেই। গ্রামের শিক্ষার্থীরা তো বিদ্যুৎই পাচ্ছে না। তারা টিভি দেখবে কিভাবে ?
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছে। তবে এই ছুটি আগামী রোজার ঈদ পর্যন্ত বাড়ানোর একটি কথাও শোনা যাচ্ছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ধারাবাহিকতা রাখতে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর পাঠদান শুরু করা হলেও ত্রুটিপূর্ণ ক্লাস কার্যক্রম হওয়ায় তা শিক্ষার্থীদের কাছে আনন্দদায়ক হয়ে উঠছে না।
আবার কোনো কোনো শিক্ষার্থী ক্লাস করে কিছুই বুঝতে পারছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ত্রুটিযুক্ত সংক্ষিপ্ত ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শেখানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন শিক্ষকরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম ধাপে গত ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর ক্লাস রুটিন প্রকাশ করা হয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ধাপে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সংসদ টেলিভিশনে পাঠদান সম্প্রচারের রুটিন প্রকাশ করা হয়।
রাজধানীর একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক জানান, টিভিতে প্রচারিত ক্লাসে কয়েকটি বড় সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে প্রথমটি হলো সাউন্ড। যারা ইউটিউব বা লাইভে ক্লাস শোনেন তাদের শব্দগত সমস্যায় বেশি পড়তে হচ্ছে। আলাদা সাউন্ডবক্স লাগিয়েও শোনা যাচ্ছে না।
দ্বিতীয়টি হলো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এবং সাদা বোর্ড ব্যবহার করায় অনেক বিষয় বোঝা যায় না। বিশেষ করে বিজ্ঞান, গণিত ও ইংরেজির বিষয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে। সূত্রগুলো যখন বোঝানো হয় তখন এক দিকে সাউন্ডের সমস্যা অন্য দিকে সাদা বোর্ডের সমস্যা। # কাশেম