বিশেষ প্রতিনিধি, দূরবীণ নিউজ :
‘লকডাউনের নামে সরকার জনগনের সাথে প্রতারণা করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঢাকাসহ ৭ জেলায় করোনা সংক্রমনের ভয়াবহ পরিস্থিতি এবং সরকারের নেয়া পদক্ষেপের সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আজ (২২ জুন) মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এটা(লকডাউন) ওয়ারকেবল না কিন্তু। একটাও কাজ করে না। ঢাকাতেও লকডাউন আছে। আপনি লকডাউন কোথাও দেখতে পান? কোথায় লকডাউন? আমি তো দেখতে পাইনা।”
‘‘ যার যেখানে খুশি যাচ্ছে, যার যেখানে যা খুশি করছে এবংকি বিয়েও হচ্ছে। আমি পরশুদিন দেখলাম একটা হোটেলে বিয়েও হচ্ছে। অথচ দেয়ার ইজ ব্যান্ড। এই যে সরকারের পুরোপুরি যে উদাসীনতা এবং এটা লোকদেখানো একটা ব্যাপার। এটা প্রতারণা মানুষের সঙ্গে যে, আমরা লকডাউন দিচ্ছে, চেষ্টা করছি।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আপনি খেয়াল করে দেখবেন যে, ‘ল এন্ড ফোর্সেস এজেন্সিজ যাদের এই লকডাউন ইমপ্লিমেন্ট করার কথা তাদেরকেও দেখা যায় না আজকাল। দে আর নট ভিজিবেল, তারা ভিজিবল না এখন।”
‘‘ দেখলাম পত্রিকায় একজন কনস্টেবল মারা গেছেন তার আবার ছবি দিয়ে বিরাট করে ছাপা হয়েছে। আর এদিকে শত শত লোক মারা যাচ্ছে তাদের কোনো কথা নেই।”
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘ আমি আগেও বলেছি, আর বলতে চাই না। বিশেষ প্রাণী পানি খায়, ঘোলা করে খায় আরকি। আমরা বহু আগেও তাদেরকে(সরকার) বার বার সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি, করোনা মোকাবিলায় এসব ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তারা নেননি। বহুদিন পরে তারা এখন এসব ব্যবস্থা(লকডাউন) নিচ্ছেন।”
‘‘ এখন আর বলে বলে আর বলতে ইচ্ছা করে না। কি বলবেন এদের তো চামড়া মোটা মানে কি? এই স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কবেই পদত্যাগ করা উচিত ছিলো। সে করে নাই। দুর্ভাগ্যজনক উল্টো তারা ডিফেন্ড করছে সবাই সবাইকে। খুব ভালো কাজ করছে। এতো ভালো স্বাস্থ্য মন্ত্রী নাকী আর হয় না।”
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। গত ২০ জুন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো মহাসচিব তুলে ধরেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সভায় অবিলম্বে টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের রোড ম্যাপ ঘোষণার দাবি জানানো হয়। জনগন জানতে চায়, সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য কি ব্যবস্থা গ্রহন করছে?”
‘এনআইডি স্বরাষ্ট্রে নেয়া দুরভিসন্ধিমূলক’মির্জা ফখরুল বলেন,‘‘ এনআইডি প্রকল্পের বিষয়ে ইসি চিঠি দেয়ার পরেও সরকার সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে দুই লাইনের একটা চিঠি দিয়ে। এটা একটা অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়েও তারা(সরকার) একটা চক্রান্ত, একটা ষড়যন্ত্র করতে যাচ্ছে যাতে তারা জনগনের পরিচয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।”
‘‘ আমরা এহেন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাচ্ছি। সরকারকে তার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহবান জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, ‘‘ এটা সত্যি কথা যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচয় পত্র দেয়ার ব্যাপারটা তাদের হাতেই থাকা উচিত। কিন্তু বাংলাদেশে যেহেতু পরিস্থিতিটা সম্পূর্ণ উল্টো। এখানে আওয়ামী লীগের সরকার যারা আছে তারা এটা পুরোপুরিভাবে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করবে বলে সবাই বিশ্বাস করে।”
‘‘ এটা শুধু বিএনপির কথা নয়, নির্বাচন কর্মকান্ডসহ অন্যান্য বিষয়গুলোর সাথে যারা জড়িত, এনজিও যারা আছেন তারা সবাই বলছে যে, এটা কোনো মতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে যাওয়া উচিত নয় তাহলে সরাসরি সরকারের হাতে পড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে সংবিধানে ইসির অন্ততঃ একটা স্বতন্ত্র স্ট্যাটাস আছে, তাদের হাতে থাকাটা বেটার বলে করি আমরা মনে করি এবং সবাই মনে করছেন।
‘দেশে বিদেশী বিনিয়োগের পরিবেশ নেই’মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত আঙ্কটার্ডের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, এ্খানে বিদেশী বিনিয়োগ প্রায় ১১% কমে গেছে। এটার কারণটা হচ্ছে যে তারা নিজেরাই আনটার্ড ও বিশ্বব্যাংকের লোকেরা বলছেন যে, এখানে বিদেশীদের বিনিয়োগ করার কোনো পরিবেশ নাই।কেনো নেই? এখানে যে দুঃশাসন, গর্ভানেন্সের অভাব, দুর্নীতি এবং সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে এখানে যখন কিছু বিনিয়োগ করতে যায় তাকে কেঁদে কেঁদে সব ফেলে দিয়ে যেতে হয়। তারপরে কনট্রাকশন করতে গেলে চাঁদা দিতে হয়।”
‘‘এখানে কোনো বিনিয়োগে পরিবেশ বিরাজ করে না। অথচ সরকারের ঢোল বাজছেই সবসময় যে, এখানে উন্নয়ন উন্নয়ন হয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নটা কোথায়? কয়েকটা ব্রিজ তৈরি করা, কয়েকটা উড়াল সেতু তৈরি করা এগুলোকে উন্নয়ন বলবো নাকী? উন্নয়নটা সেটা যেটাতে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়, অভাব কমে। যেখানে দরিদ্রের সংখ্যা বেড়ে গেছে দুই কোটি সেখানে কোন যুক্তিতে উন্নয়ন বলতে পারি।”
তিনি বলেন, ‘‘ অনেক সেক্টার আছে যেখানে বাংলাদেশের প্রচন্ড রকমের সম্ভাবনা আছে। আনটার্ড থেকে বলা হচ্ছে যে, এখানে ফার্মিসিটিক্যালসের বিশেষ করে এই মুহুর্তে করোনাভাইরাসের টিকা উতপাদনের জন্য বাংলাদেশ একটা পটেনশিয়াল একটা জায়গা। তারপরেও সরকার যে বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছেন না।”
‘‘ আমরা মনে করি, অবিলম্বে বাংলাদেশে টিকা উতপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ করা উচিত এবং এখানে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত বলে আমরা মনে করি।”
গ্রেফতারকৃত ছাত্র দলের সাবেক নেতা সাইফুল ইসলামকে পায়ের গুলি করে পঙ্গু করা, ময়মনসিংহ, ঢাকা, নারায়নগঞ্জে ছাত্র দলের ভার্চুয়াল আলোচনায় পুলিশি হামলা ও ছাত্র দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্তি এবং ভোজ্য তেলসহ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য বানিজ্য মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানান তিনি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়া দলের সব সাংগঠনিক কার্য্ক্রম ভার্চুয়ালি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
/এডিজেড/একে/দূরবীণ নিউজ