দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
আগামী জুলাই মাসে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মূল সময় আসবে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, চলতি জুন মাসের বাকি দিনগুলোতে সংক্রমণের ব্যাপকতা থাকবে। তবে আগামী মাসে করোনা ব্যাপক হারে গ্রামে–গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ার সম্বাভনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে করোনাভাইরাস থেকে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর রোগ মুক্তি, তাঁর চিকিৎসা ব্যয় এবং তাঁর লেখা ‘করোনা বনাম বিশ্ব পুঁজিবাজার ২০২০-২১ বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ বিষয়ে এক আলোচনা সভায় বিশিষ্ট এই চিকিৎসক এসব কথা বলেন।
গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ মুহিবুল্লাহ খোন্দকারের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন, অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেন, পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি , গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের চিকিৎসক নাজিব মোহাম্মদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি দিলারা চৌধুরী ও ডাকসু ভিপি নুরুল হক।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বলেন, করোনা মোকাবিলায় তাই এখনই সুষ্ঠু স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ওষুধের দাম কমানোর ব্যাপারেও জোর দেন তিনি।
করোনাভাইরাসের সংকট মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, সরকার অন্ধকার ঘরে কালো বিড়াল খুঁজে বেড়াচ্ছে। করোনা সমস্যা কীভাবে সমাধান করা হবে সেই চিন্তা সরকারের নেই।
তিনি বলন, শক্ত করে স্বাস্থ্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় ওষুধ নীতি বদলালে ওষুধের দাম কমে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় মানুষ ফতুর হয়ে যায়।’
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রায় একমাস ধরে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনা সেরে গেলেও তাঁর অসুস্থতা পুরোপুরি যায়নি। তাঁর এ অসুস্থতার সময়ে যারা পাশে ছিলেন এবং দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তাঁর খোঁজ নিয়েছেন জানিয়ে তাঁদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘মানুষ যে একজন মানুষকে এতো ভালবাসতে পারে। সেটা যুদ্ধের পরে এই দেখলাম। একাত্তরে যুদ্ধে পেয়েছিলাম ভালোবাসা। এখন এবার সেই ভালোবাসা পেলাম।’
গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের অধ্যাপক মামুন মোস্তাফী জাফরুল্লাহ চৌধুরী সম্পর্কে বলেন, ওনার বুকের প্রায় ৮০ শতাংশ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। সেটার কারণেই নানান সমস্যা হয়েছে। এই চিকিৎসক জানান, জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে চিকিৎসা দেওয়া সহজ ছিল না।
যেকোনো চিকিৎসা দেওয়ার আগে তাঁকে সেটা সম্পর্কে ভালো করে বুঝাতে হতো। কারণ জানাতে হত। জাফরুল্লাহ মনে করেন যে গ্রামের একজন মানুষ বা শ্রমিক যে ওষুধ কিনতে পারবে না তা তিনি নেবেন না। তাঁর সিটি স্ক্যানও করা যায়নি। রেমডিসিভিরের দাম বেশি বলে সেটাও নেননি। তবে জাফরুল্লাহর মানসিক শক্তি অনেক ছিল। ঢাকা মেডিকেলে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলেও তিনি যাননি। তিনি বলেছেন, তিনি মরলে এখানেই মারা যাবেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর চিকিৎসা ব্যয় সম্পর্কে মামুন মোস্তাফী বলেন, তাঁর চিকিৎসায় এই একমাসে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা লেগেছে। তবে এটা যদি কোনো করপোরেট হাসপাতালে হতো তাহলে সেটা ১০ লাখ টাকার মতো লাগত। এই টাকা খরচ করেও উনি চিন্তিত যে দেশের সাধারণ মানুষ এই টাকা খরচ করতে পারবে না।
মামুন মোস্তাফী বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য ডায়াগনোসিসের অবারিত সুযোগ করে দেওয়া উচিত এবং মানুষ যেন যখন যাবে তখন করোনা পরীক্ষা করাতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এবং অনলাইনে যুক্ত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা তুলে ধরে। তাঁরা স্বাস্থ্য আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। # কাশেম