দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার চাঁদ উদ্যান এলাকা থেকে ১৬ লাখ জাল টাকা, বিপুল পরিমান জাল টাকা তৈরির উপকরণ ও জাল টাকা তৈরির মেশিনসহ মো. হুমায়ুন কবির (৪৮)কে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা (ডিবি)। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে জাল টাকার তৈরি কাজে ব্যবহ্নত , একটি ল্যাপটপ, একটি প্রিন্টার, একটি লেমিনেশন মেশিন, একটি পেস্টিং গামের কৌটা, তিনটি টাকা তৈরির ডাইস, দুই বান্ডেল ফয়েল পেপার, দুই প্যাকেট টাকা তৈরির কাগজ ও দুইটি মোবাইল (উদ্ধার) জব্দ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ডিবি পুলিশের উত্তরা বিভাগের বিমান বন্দর জোনাল টিম বুধবার (২৭ জুলাই) দিবাগত রাতে মোহাম্মদপুর থানার চাঁদ উদ্যান এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে হুমায়ুন কবিরকে গ্রেফতার করা হয়। ওইসময় বিপুল পরিমাণ জাল টাকা ও জাল টাকা তৈরির সরঞ্জাম জব্ধ করা হয়।
এই অভিযানে নির্দেশনায় ছিলেন, ডিএমপির গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) কাজী শফিকুল আলম। অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) আছমা আরা জাহানের তত্বাবধানে এবং অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. কায়সার রিজভী কোরায়েশীর নেতৃত্বে পুরো অভিযানটি পরিচালিত হয়।
ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন,রাজধানীসহ সারাদেশেই দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র জাল টাকার কারবার করে আসছিল। জাল টাকা লেন দেনের চক্রের মূলহোতা মো. হুমায়ুন কবির। নানা অপরাধের কারণে পুলিশের চাকরিচ্যুত একজন সদস্য হুমায়ুন। তার নেতৃত্বে এবং ব্যাংকের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে জাল টাকা চলে যেত ব্যাংকের বান্ডিলে ঢুকানো হচ্ছে। এমনই চা ল্যকর তথ্য পেয়েছেন ডিবির কর্মকর্তারা। যারফলে জাল টাকার লেন দেন প্রতিরোধে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা সন্দেহভাজনদের ব্যাংকের ভেতরে ভালো করে চেক করা এবং মেশিনে যাচাই-বাছাই করে টাকা লেনদেন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এই চক্রটি ব্যাংকে টাকা জমা দিতেন অতিরিক্ত ভিড়ের মধ্যে। মূলত ঈদ ও অন্যান্য উৎসবের আগে ব্যাংকে যখন অতিরিক্ত ভিড় হতো সে সময় ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে মূলত জাল টাকাগুলো ব্যাংকে জমা দিতেন।
ব্যাংকের কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং কতদিন ধরে এই চক্রটি জাল টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে আসছিল, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞেস করি, এই জাল টাকাগুলো কোথায় কোথায় দেন। তিনি জানান, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গী এলাকায় চক্রের এজেন্টদের কাছে জাল টাকাগুলো সাপ্লাই করতেন। আবার ব্যাংকে যখন প্রচুর ভিড় হতো তখন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জাল টাকা ব্যাংকে জমা দিতেন।
কোন কোন ব্যাংকে জাল টাকা দিয়েছেন তারা। এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান ব্যাংকগুলোর নাম জানাননি। গ্রেফতার হওয়া হুমায়ুন কবির এক সময় পুলিশে চাকরি করতেন। এই অবৈধ কাজে তিনি চাকরিচ্যুত হয়েছেন কি না জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, কোনো একসময় তিনি পুলিশের চাকরি করতেন। এখন তিনি জাল টাকা তৈরি করছেন। তাই বলে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ছাড় দিচ্ছে না। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। অবৈধভাবে কেউ বড়লোক হতে চাইলে তাকেও আমরা আইনের আওতায় আনবো।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হুমায়ুন পুলিশকে জানিয়েছেন, তারা জাল টাকা পাচারও করতেন। তাদের এই পাচারের সত্যতা আছে কি না সেটিও আমরা যাচাই-বাছাই করছি বলেও উল্লেখ করেন গোয়েন্দা প্রধান। ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, তারা মূলত ঈদকে টার্গেট করে এই জাল টাকা তৈরি করে থাকে। তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি আসন্ন পূজাকে কেন্দ্র্র করে মাসে ৬০ লাখ টাকা রোলিং করার টার্গেটে এখন থেকেই তারা কাজ শুরু করেছে। অপরাধী হুমায়ুন কবিরের মোহাম্মদপুরে ভাড়া নেওয়া বাসায় জাল টাকা বানানোর কারখানা। তার অন্যান্য সহযোগীরা পলাতক রয়েছেন। এছাড়া গ্রেফতার আসামীর বিরুদ্ধে ৪টি জাল টাকার মামলা রয়েছে।
#