দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
জালিয়াতির মাধ্যমে ‘ডাচ-বাংলা ব্যাংকের’ এটিএমের ইলেকট্রিক জার্নাল পরিবর্তন করে দুই কোটি ৫৭ লাখ এক হাজার টাকা আত্মসাতের মামলায় গ্রেফতারকৃত ৩ আসামির বিরুদ্ধে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত। রিমান্ডের আসামিরা হলেন আল-আমিন বাবু, মেহেদী হাসান ওরফে মামুন ও আসাদুজ্জামান আসাদ।
আজ বুধবার (১৬ জুন) ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশিদের আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে এই রিমান্ডের এ আদেশ দেন। সেই সঙ্গে এ মামলায় গ্রেফতার আরেক আসামি সায়মা আক্তারকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ আসামিদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে ৭ দিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আসাদুল ইসলাম। শুনানি শেষে আদালত আসামি সায়মাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন আদালত। অপর তিন আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার (১৫ জুন) অভিযানে চালিয়ে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, আসামিরা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএমের ইলেকট্রিক জার্নাল পরিবর্তন করে ২ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে। এ চক্রের মূলহোতা মীর মো. শাহারুজ্জামান ওরফে রনি কৌশলে বিভিন্ন এটিএমের ইলেকট্রনিক জার্নাল পরিবর্তন করে ৬৩৭টি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১ হাজার ৩৬৩টি লেনদেন করিয়ে এ টাকা আত্মসাৎ করেন।
আসামি আসাদ বিসমিল্লাহ বিডি এন্টারপ্রাইজ নামে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্টশিপ নেন। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের বহুল শ্রমিক সম্বলিত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের স্যালারি অ্যাকাউন্ট করার কথা বলে তাদের বিভিন্ন ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেন। ডিবিবিএল এজেন্ট কর্তৃক আবেদনকৃত অ্যাকাউন্ট ও এটিএম কার্ডসমূহ তৈরির পর গ্রাহকের কাছে পাঠানোর উদ্দেশ্যে নিজ নিজ এজেন্টের কাছে হস্তান্তর করে।
কিন্তু আসাদ কার্ডগুলো তাদের অজান্তে অপর আসামি আল-আমিন বাবুর কাছে টাকার বিনিময়ে হস্তান্তর করেন। সংগৃহীত কার্ডগুলোতে ১০-২০ হাজার টাকা করে ক্রেডিট করেন বাবু। তিনি ওই টাকা এটিএম থেকে ডেবিট করার সময় ডিবিবিএল-এর আইটি অফিসার তথা চক্রের মূলহোতা শাহারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। টাকা তোলার সময় এটিএম বুথ কর্তৃক অ্যাকাউন্টের বিপরীতে যে জার্নাল সৃষ্টি হয় তা সংরক্ষণ সার্ভারে যাওয়ার আগে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের আইটি অফিসার সেটি পরিবর্তন করেন।
ডিবিবিএল-এর কর্মকর্তা অভিযুক্ত শাহারুজ্জামান টাকা উত্তোলনের আগ পর্যন্ত জার্নাল সংরক্ষণ সার্ভারের সাথে ইএসকিউ এটিএম মনিটরিং সফটওয়ারের মাধ্যমে যে এটিএম বুথসমূহ পরিচালিত হয়, সেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। সফটওয়ারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এটিএম বুথের টাকা উত্তোলনের সময় যে জার্নাল সৃষ্টি হয়, তা সার্ভারে জমা হয় না।
এরই ধারাবাহিকতায় শাহারুজ্জামান ‘সাকসেসফুল’ মেসেজকে ‘আনসাকসেসফুল’ মেসেজে রূপান্তরিত করার ফলে ওই মেসেজ পরবর্তীতে জার্নাল সার্ভারে গেলেও তা আর সাকসেসফুল মেসেজ হিসেবে গণ্য হয় না। অর্থাৎ বুথ থেকে টাকা উত্তোলিত হওয়ার পরও মেসেজ আনসাকসেসফুল দেখায়।
মামলা সূত্রে আরও জানা যায়, বাবু আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাচ-বাংলা ব্যাংকের হটলাইনে ফোন করে অভিযোগ করেন যে, তিনি এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের সময় তার ব্যালেন্স কেটে নিয়েছে, কিন্তু টাকা হাতে পাননি। এরপর ডাচ-বাংলা ব্যাংকের দায়িত্বরত অফিসার অভিযোগের সত্যতা যাচাই করেন।#