দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
রাজধানী সহ সারাদেশে ডিম ও ব্রয়লার মুরগিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে গত ১৮ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ পচিালিত অভিযানে বেশ সুফল এসেছে।
সারাদেশে ১২৩টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির মূল্য কমতে শুরু করেছে। এখন বাজারে প্রতি ডজন ডিমের মূল্য ৩০-৩৫ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির মূল্য প্রতি কেজিতে ৩৫-৪০ টাকা কমেছে। তবে এই মূল্য আরো কমবে।
কৃক্রিম সংকট ও অস্থিরতার মাধ্যমে বাজারে ডিম ও ব্রয়লার মুরগিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অতিরিক্ত বাড়ানোর অপরাধে ১৪১টি প্রতিষ্ঠানকে ১৯ লাখ ৮০ হাজার ৫শত টাকা জরিমান আদায় করা হয় অভিযানকালে।
রোববার (২১ আগস্ট) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের অভিযান পরিচালনার ফলে, এখানো প্রয়োজনীয় রশিদ, কাগজপত্র,তথা প্রমাণাদিাবহীন ডিম ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। ডিম ব্যবসায়ী সমিতিগুলো মোবাইল ফোনে ইচ্ছা মতো ডিমের দাম নির্ধারিত করে বাজার অস্থিতিশীল করছে।
গত ৯ আগস্ট থেকে সারাদেশে ডিমের বাজারে অস্থিতিশীলতা শুরু হয় এবং ১৩ আগস্ট সর্বোচ্চ ডিমের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
জ্বালানির তেলের মূল্য বৃদ্ধি অজুহাতে পরিবহনে ডিমের ব্যয় মাত্র ০৩ পয়সা থেকে ০৪ পয়সা বেড়েছে। আর এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতিটি ডিমের মূল্য ২ টাকা ৭০ পয়সা বাড়িয়েছে। ডিম ব্যবসায়ীরা পাইকারী ডিম ক্রয় এবং বিক্রয়ের রশিদ, বাজার মূল্য প্রদর্শন করতে না পারায় সারাদেশে সাধারণ ক্রেতা ভোক্তারা মারাত্মকভাবে প্রতারিত এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, অর্গানিক ডিমের মিথ্যে ঘোষণা দিয়ে ব্যবসায়ীরা নিজেরাই ডিমের গায়ে সিল মেরে বেশি মূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে ডিম বিক্রি করছেন। ডিম উৎপাদনকারী বড় বড় ফার্মগুলো কমিশন এজেন্ট নিয়োগ করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ডিমের মূল্য কারসাজি এবং ডিম বিক্রির নিলাম প্রক্রিয়ায় মূল্য অনেক বৃদ্ধি করছেন।
কোনো কোনো ব্যবসায়ী নিজেদের মধ্যে ডিম, লাইভ ওচিকিনের বেচা কেনা দেখিয়ে ভুয়া রশিদ সংরক্ষণ মূল্য অনেক বাড়িয়েছেন। এতে বড় বড় ফার্ম, ফড়িয়া ও মধ্যসত্বভোগীরা অনেক লাভবান হয়েছেন আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শত শত প্রান্তিক ছোট ছোট ফার্মের মালিক এবং সাধারণ জনগণ। ডিম ব্যবসায়ী সমিতি নামে যে সব সংগঠন আছে তাদের বৈধতা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ৮টি সুপারিশমালা রাখা হয়েছে। ডিম ও লাইভ চিকিনের বাজার ব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে ক্রয়- বিক্রয়ের নাম, ঠিকানাসহ মুদ্রিত রশিদ সংরক্ষন বাধ্যতামূলক করতে হবে। সমিতি থেকে ডিম ও লাইভ চিকিনের মূল্য নির্ধারণের প্রথা বাতিল করতে হবে। উন্মুক্ত ,স্বচ্ছ, নিলাম পদ্দতি চালু করতে হবে। নিলাম প্রক্রিয়ায় সরকারি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিেিধর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
নিরবি”্ছন্নি তদারকি কার্যক্র, পরিচালনা করতে হবে। সারাদেশে ভোক্তা সাধারণকে সচেতন করা, প্রতারিত হলে অভিযোগ করতে উৎসাহিত করতে হবে। মূল্য বৃদ্ধির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা।প্যাকেটজাত এবং অর্গানিক ডিমের নামে অতিরিক্ত মূলের বিষয়ে পরীক্ষা করে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের
এদিকে গত ২০ আগস্ট বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, রাজধানীসহ সারাদেশে পোট্রি খাতের সঙ্গে জড়িত ১০/১২টি কোম্পানির সিন্ডিকেট গত ১৫দিনে ডিম এবং মুরগির মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে অতিরিক্ত ৬১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ওই সিন্ডিকেট প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারিদের জিম্মি করে প্রতিটি ডিমে আড়াই থেকে ৩ টাকা বাড়িয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ওই সিন্ডিকের কারণে দেশের প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, অথচ ফিড ও অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়েছে। শুধু তাই নয়, উৎপাদনের সঙ্গে বিক্রয় মূল্যের সমন্বয় না হওয়ায় অনেকে খামারি তাদের খামার বন্ধ করে দিয়েছেন।
নেতারা বলেন, যেসব খামারি এসব কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিছু খামারি ৫০ কেজির এক বস্তা ফিড কিনতে পারেন ২ হাজার ৫০০ টাকায়। আর অপর খামারীদের একই ফিড কিনতে হয় ৩ হাজার ৩০০ টাকায়। কারণ ওইসব ফিডও সিন্ডিকেটের কোম্পানিরা আমদানি করে থাকে। ফলে অন্যান্য খামারিরা বাধ্য হয়ে এসব ফিড অতিরিক্ত দামে ক্রয় করেন।এসব অনিয়ম, জুলুম দেখার কেই নেই।
নেতারা আরো বলেন, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তদারকি, পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবার ট্রেড লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা, সবাইকে এই ব্যবসার ব্যাপারে ট্রেনিং করে আসা, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন, যখন তখন যাতে মূল্য বাড়াতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোরালো ভূমিকা। এছাড়া, এসব কোম্পানি যাতে ফিডের নামে বিষাক্ত খাবার আমদানি করতে না পারে সেই বিষয়েও মনিটরিং করা। #