দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
বগুড়া-২ আসনের জাতীয় পার্টির মনোনীত সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর স্ত্রী মিসেস মোহসীনা আকতারের বিরুদ্ধে প্রায় আড়াই কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুদক। কারণ তিনি পেশায় একজন গৃহিণী। দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে এমপি শরিফুলের অবৈধ সম্পদই তার স্ত্রীর সম্পদ। এই অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(২), ২৭(১) ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২ ও ৩) ধারায় যে কোন দিন মামলা দায়ের হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের অনুসন্ধানে এমপি জিন্নাহ এবং তার স্ত্রী’র বিরুদ্ধে অনেক চা ল্যকর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। এরআগে ২০২১ সালে দুদক অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এবার তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রায় আড়াই কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য-উপাত্ত পায় দুদক। ফলে যে কোন সময় এমপি জিন্নাহ তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হতে পারে।
সূত্র মতে, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি তার স্ত্রীর সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করা হয়। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রæয়ারি মোহসীনা আকতার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও দায় দেনার বিবরণ দুদকে দাখিল করেন। তিনি নিজ নামে ৩০ লাখ ৯১ হাজার ৮০০ টাকার স্থাবর ও ২ কোটি ৪ লাখ ৮১ হাজার ১৯৭ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেন। তার নামে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে। ২০২১-২২ কর বর্ষ পর্যন্ত মোট ২ কোটি ৮ লাখ ৬ হাজার ৮৯২ টাকা আয়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৫০ টাকার। তার বিরুদ্ধে মোট ২ কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭২ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুদক।ওই করবর্ষেও তার প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে ৪৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা রেমিট্যান্স আয়ের কথা বলা হচ্ছে।
এদিকে মোহসীনার সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাইকালে ৩০ লাখ ৯২ হাজার টাকার স্থাবর ও ২ কোটি ৯ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৯ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্যসহ মোট ২ কোটি ৪০ লাখ ৩৯ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য পায় দুদক। ২০১৯-২০২০ করবর্ষে মোহসীনার আয়কর নথিতে বিবিধ ব্যবসার আয় বাবদ ১০ লাখ টাকা, ১৯ই ধারায় ৫৪ লাখ টাকা আয় দেখিয়ে ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৯ টাকা আয়কর দিয়েছেন। ওই করবর্ষে তিনি তার প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে ৪৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা রেমিট্যান্স পেয়েছেন উরেøখ করেন। তিনি ১ কোটি ৫২ লাখ ২২ হাজার টাকা প্রদর্শন করেন। যার বিপরীতে ১ কোটি ৯ লাখ ৭২ টাকার গ্রহণযোগ্য উৎস পাওয়া গেলেও ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকার আয়ের কোনো বৈধ উৎস পায়নি দুদক।
সূত্র মতে,শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ গত তিন বার সংসদ সদস্য হিসেবে কর্মরত। তার অথচ তার স্ত্রীর নিজের গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস নেই। মূলত সংসদ সদস্য স্বামীর অবৈধ আয়কে বৈধ করার অসৎ উদ্দেশে তার নিজ নামে বিবিধ ব্যবসায়ী হিসেবে আয়কর নথি খুলেছেন। শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর বিরুদ্ধে করা মামলায় ১ কোটি ৫৯ লাখ ৭৮ হাজার ১১৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৮৯ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৮ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। তার বিরুদ্ধে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৪২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে ২ কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির নেতা ও এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি রাজনৈতিক হয়রানির শিকার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তার বৈধ ব্যবসা আছে, নিয়মিত কর দেন। তারপরও তাকে ইচ্ছা করে হয়রানি করা হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে তাকে আটকানো কৌশল হিসেবে দুদক দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করেন। এছাড়া তার স্ত্রী ছোট-খাট ব্যবসা করেন। নিয়মিত করও দিচ্ছেন। #