দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
প্রাণঘাতি করোনাভাইরার্সের সংক্রামণ প্রতিরোধে এবং জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জন্য একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের মালিকদের সাথে সরকারের পক্ষ থেকে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (চুক্তি) করা হয়েছিল। কিন্তু চুক্তির পর ইতোমধ্যে কয়েকটি হাসপাতালের মালিক ওই চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে সরকার এবং নিরীহ গনগণের সাথে মারাত্নক প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে রাতারাতি কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে নিয়েছেন।

রিজেন্ট হাসপাতালের (মালিক) চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে মো. সাহেদ করিম এবং জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী প্রতারকদের মধ্যে অন্যতম। তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে প্রশাসন আইনী পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে জানা যায়।

জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরীকে গ্রেফতার করে রিমান্ড নেয়া হয়েছে। আর রিজেন্ট হাসপাতালের (মালিক) চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে মো. সাহেদ করিমসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তার ২টি হাসপাতাল সিলগালা করা হয়েছে এবং বেশ কয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে প্রতারক সাহেদ এখনো গ্রেফতার হয়নি। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমনই একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার প্রমাণ রয়েছে রিজেন্ট হাসপাতালের (মালিক) চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে মো. সাহেদ করিম। তার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানতেন। তিনিই স্থানীয় সরকার ও জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে ওই অনুষ্ঠানে থাকার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। বিষয়টি জানতেনসে সময় স্বাস্থ্যসচিবের দায়িত্বে থাকা আসাদুল ইসলামও।

গত ২১ মার্চ মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কক্ষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আগে করোনাসংক্রান্ত একটি বৈঠক হয়। এর পরপরই উপস্থিত সচিবেরা যখন বের হয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেন, তখন মন্ত্রী তাঁদের বসতে বলেন। এ সময় চা-নাশতা দেওয়া হয়। এরপরই মহাপরিচালকের কক্ষে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ঢোকেন। পরে মন্ত্রীর অনুরোধে অন্য সচিবদের উপস্থিতিতে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। অথচ মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় এখন এ বিষয়ে কিছু জানে না বলছে।

ওই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সমঝোতা স্মারকে সই করছেন মো. সাহেদ। তাঁর পাশে বসা স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। পেছনে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা যায় সাবেক স্বাস্থ্যসচিব, স্থানীয় সরকারসচিব ও জননিরাপত্তা সচিবকে।

স্বাস্থ্যসচিবের দায়িত্বে থাকা আসাদুল ইসলামকে গত ৪ জুন সরিয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব করা হয়েছে। জানা যায়, তাঁর নির্দেশে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) আমিনুল হাসান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অধিদপ্তরে করোনা সংক্রান্ত বৈঠকের পর মন্ত্রীর অনুরোধেই ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। একই কথা বলেন জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকের পর মন্ত্রী আমাদের চা খাওয়ালেন। এরপর বললেন, “আপনারা যেহেতু উপস্থিত আছেন, আপনারাও দাঁড়ান।”’

স্বাস্থ্যে কেলেঙ্কারি বিতর্কিত হাসপাতালকে কোভিড চিকিৎসার দায়িত্ব দিয়ে এখন না জানার কথা বলছেন মন্ত্রী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত শনিবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করা হয়। পরদিন মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়ে এর ব্যাখ্যা চায়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা জানতে চায় মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় যে ব্যাখ্যা চেয়েছে, কাল-পরশুর মধ্যেই আমরা সব জানাব।’
তবে স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী গতকালও আমাদের জানিয়েছেন, চুক্তির বিষয়ে তিনি জানতেন না।’

উল্লেখ্য, সরকার রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখাকে (উত্তরা ও মিরপুর) কোভিড চিকিৎসার মতো স্পর্শকাতর দায়িত্ব দিয়ে ওই সমঝোতা স্মারকে সই করে। অথচ হাসপাতালটির এ বিষয়ে তেমন সক্ষমতা নেই। নেই হাসপাতাল পরিচালনার অনুমতি (লাইসেন্স)। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা না করেই দেওয়া হতো সনদ।

৬ জুলাই র‌্যাব অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দেয় হাসপাতালটি। হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এক কিশোরসহ ৯ বেতনভুক কর্মচারী গ্রেপ্তার হলেও মূল হোতা সাহেদ এখনো ধরা পড়েননি। তাকে নাকি খুঁজে পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। যারফলে তাকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। #