দূরবীণ নিউজ ডেস্ক:
দেশেরে আলোচিত অপরাধের ঘটনা টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে নিয়ে রিসিভার নিয়োগের আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
আজ মঙ্গলবার (২৯ জুন) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত এ আদেশ দেন। আদেশটি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে উদ্দেশ করে দেয়া।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদুল হক মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) দুদকের দায়ের করা এক মামলায় ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর সব সম্পত্তি রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে নিয়ে রিসিভার নিয়োগের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ (মঙ্গলবার) শুনানি শেষে আদালত তদন্ত কর্মকর্তার আবেদন মঞ্জুর করেছেন। এর আগে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর সকল সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে গত বছরের ২৩ আগস্ট ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে মামলা করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬ (২) ধারা, ২৭ (১) ধারা, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারাসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
দুদক চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সাল থেকে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ২০১৯ সালের ২০ এপ্রিল ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর সম্পদের হিসাব দাখিলের জন্য নোটিশ করা হলে একই বছরের জুন মাসে তারা সম্পদের হিসাব দাখিল করেন।
এই সম্পদ বিবরণীর আলোকে দীর্ঘ অনুসন্ধানে প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রায় ৪ কোটি টাকার বেশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুদক।
দুদক সূত্র জানায়, ওসি প্রদীপের সব সম্পত্তিই তার স্ত্রী চুমকি কারণের নামে। যার কোনো বিশ্বাসযোগ্য জ্ঞাত আয়ের উৎসই নেই। চুমকি কারণের নামে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৮৬৯ টাকার সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে তিনি পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে খরচ করেছেন ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
চুমকি কারণের পূর্বের সঞ্চয়, উপহার, বাড়িভাড়া থেকে বৈধ আয় হিসেবে ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ২৩৪ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। বৈধ আয় বাদ দিলে চুমকির নামে মোট তিন কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার অবৈধ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। এটা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে সম্পদ ক্রয় করে স্ত্রীর নামে রেখেছেন বলে দুদক অনুসন্ধানে তথ্য পেয়েছে।
গত বছরের ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় নিহতের বোন শাহরিয়ার শারমিন ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ আগস্ট টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন।#