দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা কোবানীকে ঘিরে প্রচুর গরু-ছাগাল পালন করছেন গামারীরা। এরমধ্যে মিরসরাই উপজেলায় ৪০ হাজার পশু প্রস্তুত করছেন খামারিরা। উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় অবস্থিত ছোট বড় ২৬৫টি খামারে এসব পশু পালন করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বাজারের চেয়ে খামারে ক্রয় বিক্রয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে।
জানা গেছে, প্রতি বছর কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার খামারি ও কৃষকরা গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত থাকেন। কোরবানি ঈদে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে গবাদিপশু ফেনী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় রফতানি করে থাকে উপজেলার খামরিরা।
দেশে গেল বছর ভারত থেকে কোরবানির হাটে পশু কম আমদানি করায় দেশি গরুর চাহিদা ছিল বেশি। খামারিরা ভালো লাভও করেছিল। তাই এ বছরও কোরবানিকে সামনে রেখে দেশি গরু ও ছাগল মোটাতাজা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার খামারি ও কৃষকরা।
তবে এ বছরও ভারতীয় গরু না আসলে বেশ লাভবান হবে এমনটাই আশা করছেন তারা। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও গবাদিপশু লালনপালনকারীরা ভালো দামের প্রত্যাশায় রয়েছেন।
জানা যায়, মিরসরাই উপজেলায় স্থায়ীও অস্থায়ী মোট ২৪টি হাটে গবাদিপশু বেচাকেনা হয়। এবারও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাট বসানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ২৪টি হাটের মধ্যে উপজেলার মিরসরাই বাজার, বড়তাকিয়া, মিঠাছরা, জোরারগঞ্জ, বারইয়ারহাট, আবুতোরাব গরুরবাজারগুলো বড়।
এসব বাজারে বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারিরা এসে গরু কিনে ফেনী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রয় করে। এছাড়া স্থানীয় বেপারিরা এলাকায় কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু কিনে তা বিভিন্ন বাজারে বিক্রয় করে।
বর্তমানে এ উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার মানুষ (খামারি, কৃষক ও বেপারিরা) এ পেশায় রয়েছে। খামারি ছাড়াও উপজেলার সাধারণ কৃষকরা বাড়তি আয়ের জন্য বাড়িতে একটি দুইটি করে গরু মোটাতাজা করে। ঈদের সময় আকার ভেদে গত বছর প্রতিটি গরু ৪৫ হাজার থেকে দেড়লাখ টাকায় বিক্রয় করেন এখানকার গবাদিপশুর খামারি ও কৃষকরা। উপজেলায় ৫০ ভাগ গরু মোটাতাজা করছে খামারিরা আর বাকি ৫০ ভাগ করছে সাধারণ কৃষকরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের তথ্য মতে, মিরসরাই উপজেলায় ছোট-বড় মিলে ২৬৫টি খামার রয়েছে। এবার এসব খামারে হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে ১৮ হাজার ৫৭৫টি ষাড়, ১২ হাজার ৮১২টি বলদ, ১ হাজার ১০০ গাভী, ৪ হাজার ৪১৬টি মহিষ, ৫ হাজার ৫৮৭টি ছাগল, ৩ হাজার ১৭৭টি ভেড়া। গত বছরের তুলনায় এবার গরুর সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া করোনার কারণে বিগত ৩ মাস বিয়ে, জেয়াফত, মেজবানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবার কোরবানিতে গরুর সংখ্যা বেড়েছে।
উপজেলায় রেড় চিটাগাং গরু সবচেয়ে বেশি মোটাতাজা করা হয়। এছাড়া শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান, জার্সি ও দেশি গরুও মোটাতাজা করা হয়। জানা গেছে, এবারও কোরবানীর জন্য সবচেয়ে বেশি কোরবানীর গরু প্রস্তুত রয়েছে নাহার ডেইরি ফার্মে। এবার প্রতিষ্ঠানটি প্রায় সাড়ে তিনশ’ গরু কোরাবানীর জন্য মোটাতাজা করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনে গরু বেচাকেনা করছেন।
নাহার এগ্রো গ্রুপের জিএম (প্রোডাক্টন) মনোজ কুমার চৌহান বলেন, অমরা নিজস্ব ফার্মে জন্ম নেয়া হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের এই গরুগুলোকে নিয়মমাফিক নেফিয়ার ঘাস ছাড়াও পুষ্টিকর কাঁচামাল দিয়ে তৈরি ক্যাটেল ফিড খাওয়ানো হয়। আমাদের গরুগুলোকে প্রাণঘাতী স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ খাওয়ানো হয় না।
গরুগুলো হয় রোগমুক্ত, স্বাস্থ্যবান ও প্রাণবন্ত। মিরসরাইয়ের নলখোঁ, চট্টগ্রাম শহরের খুলশী আবাসিকে সেলস সেন্টার রয়েছে। আমাদের খামারে ৪শ’ থেকে ৯শ’ কেজি ওজনের গরু রয়েছে। যেগুলোর বাজারমূল্য ১ লাখ থেকে ৭ লাখ পর্যন্ত।
নাহার এগ্রো গ্রুপের পরিচালক তানজীব জাওয়াদ রহমান বলেন, কোরবানীর গরু হাট বাজারে নেই। খুলশীতে সেলস ও প্রদর্শন সেন্টার রয়েছে। সেলস সেন্টার বা খামার থেকে বিক্রি করা হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে একজন ক্রেতার জন্য আধা ঘণ্টা সময় দেয়া হবে। অনলাইনে আগে থেকে সময় নিতে হবে। সেই মতে ক্রেতাদের ডিসপ্লে সেন্টার বা খামারে সময় দেয়া হবে।
ডোমখালী আরবিসি এগ্রিকালচার লি: এর স্বত্ত্বাধিকারী শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কোরবানীকে ঘিরে আমার খামারে গরু মোটাতাজা করে প্রস্তুত করা হয়েছে। ক্রেতারা খামারে এসে পছন্দ করে কোরবানীর গরু ক্রয় করতে পারবেন।
উপজেলার ঠাকুরদিঘী এলাকার সিরাজ ডেইরি ফার্মের স্বত্ত্বাধিকারী মো: সিরাজুল ইসলাম জানান, তার খামারে এবার ৩০টি গরু কোরবানী উপলক্ষ্যে বিক্রির জন্য মোটাতাজা করা হচ্ছে। ৭৫ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে এখানে। তিনি বলেন, আমার কোন গরু বিক্রির জন্য বাজারে নেয়া প্রয়োজন হয় না, ক্রেতারা খামারে এসে পছন্দ মত গরু নিয়ে যান।
মিরসরাই উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণে ক্ষতিকর স্টেরয়েড হরমোন জাতীয় ঔষুধ ব্যবহার ও বিক্রি না করার জন্য দোকানদার ও খামারীদের অনুরোধ করে আসছি। উপজেলায় ক্ষতিকর স্টেরয়েড হরমোন জাতীয় ঔষুধ ব্যবহারকৃত গবাদিপশু নেই বলে আমার বিশ্বাস।
মিরসরাইয়ে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে দেশি মাঝারি আকারের গরুর। বিগত বছরগুলোতে কোরবানির পশুর বাজারে আমরা দেখেছি সংকট হয়নি আশা করি এবারও সংকট হবে না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর থেকে নিরাপদ গো মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে আমরা খামারীদের দীর্ঘদিন ধরে উদ্বুদ্ধ করেছি এবং মনিটরিং কার্যক্রমও জোরদার করেছি। ফলে আশানুরূপ ফল এসেছে। আমরা সরকারিভাবে তাদেরকে ওষুধ ফ্রি দিয়েছি, এরমধ্যে কৃমির ওষুধ ও ভ্যাকসিন রয়েছে। কৃষক ও খামারিদের কয়েকবার করে ট্রেনিং দেয়া হয়েছে।
সবসময় বিভিন্ন পরামর্শসহ খোঁজখবর রেখেছি। প্রতিবারের মতো এবারও বাজারগুলোতে অন্যান্য বিষয়ের সাথে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি নজরদারি করবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর। #