দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
সরাকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঘুষ লেনদেন, অর্থ পাচার ও নানা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজের গতি এখন অনেক বেড়েছে। প্রাপ্ত অভিযোগ নিয়ে দ্রæত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপিশ কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে এগুচ্ছে। রাজধানীসহ সারাদেশ থেকেই আসছে প্রভাশালী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, বিদেশে অর্থপাচার, ঘুষ লেনদেনসহ নানা অভিযোগ ক্রমেই বাড়ছে।
ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারদের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেন, অর্থআত্মসাৎ ও নানা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিয়েছে দুদক। করনোর কারণে গণশুনানি বন্ধ ছিল। আবার শিগগিরই দেশের বিভিন্ন জেলায় এই গণশুনানি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন জানান দুদক কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রাপ্ত অভিযোগের তথ্য যাচাই-বাছাই করি, কর্মপদ্ধতি তৈরি করি। তথ্য প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কোনো কারণে থামার কোনো সম্ভাবনাও নেই। দুর্নীতিবাজদের ধরতে আমাদের এনফোর্সমেন্ট টিম ২৪ ঘণ্টা তৈরি থাকে। প্রতিদিনই আমাদের অভিযান চলছে’। কাজের গতি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের টোল ফ্রি ১০৬ নম্বরে ২০২০ ও ২০২১ সালে ১ লাখ ১৩ হাজার ৭৭৩টি কল এসেছে। এর মধ্য থেকে ২ হাজার ৪৪৯টি অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়েছে। কেউ যদি দুর্নীতি বা অনিয়ম করে আমাদের বিধান মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’।
এদিকে গত ১ মার্চে দ্বিবার্ষিক দুদকের প্রতিবেদনে বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামোর জোরদারের পাশি কাজের গতি বাড়ানোর নানা উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। গত জানুয়ারিতে কক্সবাজার জেলা কার্যালয় উদ্বোধন হয়েছে। আগামী ১ জুলাইয়ে আরও ১৩টি জেলা কার্যালয়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। দুদকের সাংগঠনিক কাঠামোতে আরও ১৩২ জন সহকারী পরিচালক ও ১৪৭ জন উপ-সহকারী পরিচালক নিয়োগ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। একই সঙ্গে অন্যান্য পদের নিয়োগ প্রক্রিয়াও চলমান।
দুদক প্রকাশিত গত ১ মার্চে দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন করোনার কারণে আগের বছরের তুলনায় ২০২১ সালে সবচেয়ে কম অভিযোগ জমা পড়েছে দুদকে। ওই বছর ১৪ হাজার ৭৮৯টি প্রাপ্ত অভিযোগের মধ্যে ৫৩৩টি অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়। এর আগে ২০২০ সালে ১৮ হাজার ৪৮৯টি প্রাপ্ত অভিযোগের মধ্যে ৮২২টি অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয় । আর ২০১৯ সালে ২১ হাজার ৩৭১টি অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে ।
দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদনে সরকারি পাঁচ প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির ৫৪টি উৎসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে অনেক সুপারিশ। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ১০টি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ৬টি, সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ১০টি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য খাতে ১৩টি এবং প্রাণিসম্পদ খাতে দুর্নীতির ২৮টি উৎসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট ২০১৯ সাল থেকে সাংগঠনিক কাঠামোতে যুক্ত হয়। তবে ২০২০ সালে ৪৮৭টি ও ২০২১ সালে ২৪৫টি অভিযান পরিচালনা করেছে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। আর ২০১৮ সাল থেকে দুদকে নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট সাংগঠনিক কাঠামোতে যুক্ত হয়েছে।
২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৬৬৫টি অভিযোগ গোপনে তথ্যানুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়। এর মধ্যে ২৫০টির নিষ্পত্তি হয়েছে এবং ৪১৫টি অভিযোগের গোপন তথ্যানুসন্ধান চলমান রয়েছে।
দুদকের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উক্ত সংস্থার চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে ১৫৪টি অভিযোগ অনুসন্ধানের নেয়া হয়েছে।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতোমমধ্যে দুদকের বেশ কিছুর সাফলতা উল্লেখ করা হয়েছে প্রকাশিত প্রতিবেদনে। প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের ৫০৭ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক, মামলা নিষ্পত্তিতে সাফলতা অর্জন করেছে। ২০২০ ও ২০২১ সালে দুর্নীতিবাজদের প্রায় ৫০৭ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও দুর্নীতির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ায় এক হাজার ৩১৪ কোটি টাকার বেশি সম্পদ অবরুদ্ধ করা হয়েছে। দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট ওই সম্পদ দেখভাল করছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ, ২০২০ সালে আদালতের আদেশে ১৮০ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৭৪৬ টাকার সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১৫২ কোটি ৯২ লাখ ৮৬ হাজার ৪৯৬ টাকা অবরুদ্ধ করেছে। ২০২১ সালে ৩২৬ কোটি ৭১ লাখ ৪৬ হাজার ৬২৮ টাকার সম্পত্তি ক্রোক ও এক হাজার ১৬১ কোটি ৫৮ লাখ ১৪ হাজার ৪৮০ টাকার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বেদেশিক মুদ্রা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
বিচারাধীন মামলার নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দুদকের সাফলতা বাড়ছে। ২০২০ সালে নিম্ন আদালতে দুদক ও বিলুপ্ত ব্যুরোর মোট বিচারাধীন ৩ হাজার ৩৮২টি মামলার মধ্যে ১৭৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে দুদকের পক্ষে রায় হয়েছে ১২১টি মামলায়। দুদকের মামলায় সাজার হার ৭২ শতাংশ আর বিলুপ্ত ব্যুরোর আমলের মামলায় সাজার হার ৪৮ শতাংশ।
অর্থাৎ গড়ে সাজার হার ৬৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ২০২১ সালে মোট ৩ হাজার ৪৩৪টি মামলার মধ্যে ২০৩টি নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে দুদকের পক্ষে রায় হয়েছে ১১৯টি মামলায়। দুদকের মামলায় সাজার হার ৬০ শতাংশ আর বিলুপ্ত ব্যুরোর মামলায় সাজার হার ৩০ শতাংশ। গড়ে সাজার হার ৫৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। #