দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
ঘুষ,দুর্নীতি, জালিয়াতি এবং অবৈধভাবে বিপুল পরিমান সম্পদ অর্জনকারীদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে,দুদকের বেশ কিছু কর্মকর্তা দাপটের সাথে নিজেরা অভিযুক্তদের কাছ থেকে অবৈধভাবে সুযোগ সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে। মাঝে মধ্যে দুই চারজনের নাম প্রকাশিত হয়। এর বাইরেও নিরবে চলছে অভিযুক্তদের অর্জিত সম্পদ থেকে কৌশলে কিছু সম্পদ/ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার খেলা। যারফলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান একবার শুরু হলে,আর সহজে শেষ হয় না। দুদকের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা ঘুষ খোর ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিষয়ে কমিশনকে আরো সজাগ হবার পরামর্শ অভিজ্ঞ মহলের।
কারণ দুদকের কতিপয় অসৎ,দুর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তা -কর্মচারীর কারণে এ সংস্থার গৌরব আজ ম্লানহয়ে যাচ্ছে। দুদকের প্রধানকার্যালয় থেকে শুরু করে জেলা ও সমন্বীত জেলা কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের প্রতি নজরদারী আরো বাড়ানো প্রয়োজন ।আর এ কাজে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটকে আরো সক্রিয় করার সময় এসেছে বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।
তবে দুদকে এখনো বেশ কিছু সৎ,সাহসী,মেধাবী, দক্ষ ও পরিশ্রমী কর্মকর্তা আছেন। দুদকের ওইসব ভালমানের কর্মকর্তাদের ভয়ে এখনো অনেক প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজও আতঙ্কে আছেন। মূলত এ সৎ এবং সাহসী কর্মকর্তারই ‘দুদককে একটি শক্তিশালী বাঘ’ হিসেবে রাষ্ট্র ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত করছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সই করা পৃথক দুটি আদেশে এবার অর্থ ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির অভিযোগে দুদক সহকারী পরিচালক ও উপ-সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন- সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ও উপ-সহকারী পরিচালক সুদীপ কুমার চৌধুরী।
দুদকের অফিস আদেশে জানানো হয়, সুদীপ কুমার চৌধুরী বগুড়ায় উপ-সহকারী পরিচালক থাকাকালীন বগুড়া পুলিশ লাইনসের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর হোসেনের সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আশ্বাস দেন। বিনিময়ে তার কাছ থেকে ও তার আত্মীয়ের কাছ থেকে উৎকোচ নেন।
উৎকোচ দাবি ও গ্রহণের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড দুদকের ফরেনসিক ল্যাব বিশেষজ্ঞদের মতামতে প্রমাণ পাওয়া যায়। একইসঙ্গে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সাক্ষীদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ না করার জন্য নির্দেশনা যথাযথ প্রতিপালন না করে দুদকের আদেশ অমান্য করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
সুদীপ কুমার কমিশনের বৈধ আদেশ অমান্য করে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে দুদকের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছেন বলে অফিস আদেশে মন্তব্য করেছে দুদক।
এ ঘটনায় সুদীপ কুমার চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর ৩৯(খ), ৩৯(ঙ) ও ৩৯(চ) বিধি অনুযায়ী যথাক্রমে ‘অসদাচরণ’, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ ও ‘দুর্নীতি’ এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। ফলে বিধিমালার ৪৩(১) বিধি অনুযায়ী তাকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে তিনি প্রচলিত বিধি অনুযায়ী খোরাকি ভাতা পাবেন বলে অফিস আদেশে জানানো হয়।
দুদকের আরেকটি অফিস আদেশে বলা হয়, মো. মোস্তাফিজুর রহমান পাবনায় উপ-সহকারী পরিচালক থাকাকালীন তার অফিস কক্ষে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার চরচালা গ্রামের মৃত শমসের আলীর ছেলে মো. সামছুল হকের কাছ ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। আর তার কাছ থেকে ৭৬ হাজার টাকা নেন। চলতি বছরের ২৬ জুন একটি ভিডিও ফুটেজ দুটি টিভি চ্যানেলের সংবাদে প্রচারিত হয়। প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মেসার্স হক টেক্সটাইল লিমিটেডের মালিক মো. শামসুল হকের কাছ থেকে তিনি ঘুষ নিয়েছেন। তাই পাবনার দুদকের উপ-পরিচালক তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া অনুরোধ জানান।
তার বিরুদ্ধে যথাযথভাবে সরকারি দায়িত্ব পালন না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ নিয়ে চাকরি শৃঙ্খলা-পরিপন্থী কাজ করার অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। তাই বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর ৩৯(খ) ও ৩৯(ঙ) বিধি মোতাবেক যথাক্রমে ‘অসদাচরণ’ ও ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ অভিযোগে বিভাগীয় মামলা (নম্বর ০৮/২০২৩) দায়ের করা হয়। ওই বিধিমালার ৪৩(১) বিধি অনুযায়ী তাকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে তিনি প্রচলিত বিধি অনুযায়ী খোরাকি ভাতা পাবেন।# কাশেম