দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
দেশের বহুল আলোচিত ৪০ লাখ টাকার ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় পুলিশের বরখাস্ত হওয়া উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান মিজানকে ৩ বছর এবং দুদকের সাময়িক বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে ৮ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। একই সঙ্গে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে ৮০ লাখ টাকা অর্থদন্ডও রায় প্রদান করেছেন আদালত।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম উক্ত দুই আসামীর উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে আসামী মিজানকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এবং দুদকের বাছিরকে নারায়ণগঞ্জ থেকে পুলিশের গাড়িতে করে বেলা ১১টায় আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়।
এদিকে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা ৪০ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনানি গ্রহণ করেছেন এবং অপরাধের ধরন অনুযায়ী আসামী পুলিশের বরখাস্ত ডিআইজি মিজানুর রহমানকে ৩ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন। একই মামলায় অপর আসামী দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে পৃথক দুই ধারায় ৮ বছরের কারা দন্ড এবং ৮০ লাখ টাকা অর্থদন্ড দিয়েছেন আদালত।
সূত্র মতে, গত ১০ ফেব্রæয়ারি দুদক ও আসামীপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায় ঘোষণার জন্য ২৩ ফেব্রæয়ানি দিন ধার্য করেন। এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে ১৭ জন সাক্ষির মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। গত ৩ জানুয়ারি আত্মপক্ষ সমর্থন শেষে আসামি মিজানুর রহমান ও খন্দকার এনামুল বাছিরের কাছে বিচারক সাফাই সাক্ষী দেওয়ার বিষয়ে জানতে চান।
এ সময় আসামিরা সাফাই সাক্ষী না দিলেও লিখিত বক্তব্য জমা দেবেন বলে আদালতকে জানান। এজন্য তারা সময়ও চান। গত ২৪ জানুয়ারি বিচারিক আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করে দুদক। যুক্তি উপস্থাপন শেষে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করেন দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল।
দুদকের মামলার অভিযোগে উল্লেখ, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার থাকাকালে বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রীকে গ্রেফতার করানোর অভিযোগ ওঠে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে। এছাড়া এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। নারী নির্যাতনের অভিযোগে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৪ জুন সম্পদের তথ্য গোপন ও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এর অনুসন্ধান কর্মকর্তা ছিলেন দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির।
মামলার তদন্ত চলাকালে ডিআইজি মিজান অভিযোগ করেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেওয়ার জন্য ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন দুদকের পরিচালক এনামুল বাছির।এ অভিযোগ ওঠার পর বাছিরকে সরিয়ে দুদকের আরেক পরিচালক মো. মঞ্জুর মোরশেদকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দুদক পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যাকে প্রধান করে তিন সদস্যের দলকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই মিজান ও বাছিরের বিরুদ্ধে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা ১-এ মামলাটি করেন দুদকের পরিচালক শেখ মো.ফানাফিল্যা। তিনি এ মামলাটি তদন্ত ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। আসামীরা মামলা অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন জানান। পরে ২০২১ সালের ১৬ এপ্রিল আদালত দুই আসামীর অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। এরপর গত ১৯ আগস্ট মামলার এক নম্বর সাক্ষী ও বাদি দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন।
উল্লেখ্য, ডিআইজি মিজানুর রহমানসহ চারজনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে দুদকের করা আরেক মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৬-এর বিচারক আসাদ মো.আসিফুজ্জামানের আদালতে বিচার চলছে। গত ২০ অক্টোবর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারের আদেশ দেন। #