দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য সরকার ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ২ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে।আর এই অর্থ দিয়ে যে সব প্রতিষ্ঠান ন্যূনতম ৮০ ভাগ পণ্য রফতানি করে তাদের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন প্রদান করা হবে। তবে এই তহবিল থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মকর্তার বেতন-ভাতা দেয়া যাবে না।
সরকার ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণের প্রথম কিস্তি হিসেবে এই অর্থ ছাড়ের অনুমতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। সোমবার বিকেলে এই অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই অর্থ ছাড় করবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, স্বল্প সময়ে বেতন প্রদানে জটিলতা এড়াতে ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড়ে শ্রমিকদের তালিকা প্রণয়নসহ (ডেটা বেইজ) আনুষঙ্গিক তথ্যের শর্তটি শিথিল করা হয়েছে। এরই মধ্যে শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ব্যাংকের তথ্যও রয়েছে। তবে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণের অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে এগুলো পরিপূর্ণভাবে দিতে হবে। গত ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রণোদনা ঋণ তহবিলের ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান মোট উৎপাদনের ন্যূনতম ৮০ শতাংশ রফতানি করে, তারা রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ২ শতাংশ সুদে এই তহবিলের অর্থ পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবে। যেসব কারখানা সচল আছে, তারাই কেবল ঋণ পাবে।
কোনো লে-অফকৃত কারখানা এই তহবিল থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা পাবে না। যারা ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন-ভাতা ইতোমধ্যে দিয়ে দিয়েছে, তারাই কেবল সচল কারখানা হিসেবে বিবেচিত হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান তিন মাসের বেতন-ভাতা দেয়ার সমপরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে নিতে পারবে এই তহবিল থেকে। এই তিন মাস হচ্ছে-এপ্রিল, মে ও জুন।
এই ঋণের গ্রেস পিরিয়ড হবে ছয় মাস। ঋণের পুরো অর্থ শোধ করতে তারা দুই বছর সময় পাবে। ৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডের পরের ১৮ মাসে ১৮ কিস্তিতে ঋণের টাকা শোধ দিতে হবে। কোনো ঋণ গ্রহীতার ঋণের কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধিত না হলে প্রচলিত নিয়মে ওই ঋণ শ্রেণীকরণ করা হবে এবং ঋণগ্রহীতা খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ক্ষেত্রে বকেয়া কিস্তির ওপর ২ শতাংশ হারে দণ্ড সুদ আরোপ করা হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, মজুরির টাকা সরাসরি শ্রমিকের ব্যাংক হিসাব বা মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে (এমএফএস) পাঠিয়ে দেবে ব্যাংক।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এখন পত্রিকা খুললেই দেখা যাচ্ছে বেতন-ভাতার দাবিতে বিভিন্ন তৈরী পোশাক কারখানার শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসছে। এতে দেশে চলমান লকডাউন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ব্যাপক সংখ্যক শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসার কারণে করোনা ছড়িয়ে পড়ারও মারাত্মক ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে। তাই কিছু শর্ত শিথিল করে এই অর্থ ছাড় করা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পেতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী সব শর্তই পূরণ করতে হবে। এর আগে, করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মজুরি দেয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন।
এর আগে গত রোববার অর্থ বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে দেয়া হয়, কোনো লে-অফকৃত কারখানা এই তহবিল থেকে কোনো ঋণ পাবে না। অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে সচল রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ সুবিধা প্রদানের বিষয়ে অর্থ বিভাগের মতামত হচ্ছে-
যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান ৮০ শতাংশের অধিক সরাসরি পণ্য রফতানি করে থাকে তাদের এলসি পরীক্ষা সাপেক্ষে কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের লক্ষ্যে গঠিত ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে ঋণ প্রদান করা যাবে। তবে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান যদি লে-অফ ঘোষণা করে তাহলে ওইসব প্রতিষ্ঠান এ তহবিল থেকে ঋণ পাবে না।
৮০ শতাংশের কম বিবেচিত রফতানিকারকরা ২০ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল থেকে এসব প্রতিষ্ঠান ঋণ নিতে পারবে। যা দিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে। জানা গেছে, এরই মধ্যে দেশের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কারখানা লে-অফ করা হয়েছে। লে-অফের পথে রয়েছে আরো কারখানা। এসব কারখানার জন্য এই তহবিল থেকে অর্থ পাওয়া এখন কঠিন হয়ে পড়বে। #