দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
কোভিড-১৯ উদ্ভূত সংকট এর প্রভাব উত্তরণে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার অংশীদার হিসেবে অতীতের যে-কোনো সময়ের তুলনায় অধিক আর্থিক সহায়তা এবং এক্ষেত্রে সম্ভাব্য দুর্নীতিরোধে সর্বোচ্চ পর্যায়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রোববার (২৬ এপ্রিল) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে টিআইবি বলছে, বিশে^র কোনো দেশেরই কোভিড-১৯ উদ্ভূত বৈশি^ক মহামারি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও মোকাবেলা করার মতো পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও সক্ষমতা ছিলো না। বাংলাদেশও তার ব্যাতিক্রম নয়।
জিডিপিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নানাবিধ সূচকে উল্লেখযোগ্য অর্জন এবং দুর্যোগ মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামর্থ্য ও সক্ষমতা বৈশি^ক পর্যায়ে স্বীকৃত হলেও কোভিড-১৯ উদ্ভূত চলমান সংকট স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতের অর্জনসমূহকে ধরে রাখার সম্ভাবনাকে এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “কোভিড-১৯ উদ্ভূত চলমান বিপর্যয়ে স্বাস্থ্যখাতের পাশাপাশি বহুমুখী আর্থ-সামাজিক ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র এ পর্যায়ে নিরূপণ সম্ভব না হলেও এটা পরিস্কার যে, এ গভীর সংকট উত্তরণে উন্নয়ন সহযোগীদের ব্যাপক আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য।
এক্ষেত্রে, দীর্ঘকালের নির্ভরযোগ্য অংশীজন হিসেবে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি অতীতের যে-কোনো সময়ের তুলনায় ব্যাপক ও বিস্তৃত পরিসরে সহায়তাসহ বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবার জন্য।”
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “আমরা মনে করি উন্নয়ন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাসমূহ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন। তাই, আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি সব ধরনের প্রকল্প ও উদ্যোগের সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও কঠোর দুর্নীতিবিরোধী মানদণ্ডের চর্চা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “চলমান মহাসংকট মোকাবেলা ও উত্তরণের ক্ষেত্রে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দ্রুততর হওয়া অনেক ক্ষেত্রে যৌক্তিক, কিন্ত তা কোনোভাবেই এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্তের স্বপ্রণোদিত এবং চাহিদামাফিক প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাকে যথার্থতা দিতে পারে না। বিশেষ করে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের তথ্য প্রাপ্তি ও তার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন ও মতপ্রকাশে কোনো অন্তরায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “দুর্যোগকালে ও সংকটের দ্রুত উত্তরণের স্বার্থে কখনও কখনও ক্রয়-প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার প্রয়োজন হবে, কিন্তু এক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। ক্রয়-প্রক্রিয়ায় সকল ধরনের যোগসাজশ, রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব, স্বার্থের সংঘাত ও অতিমূল্য নির্ধারণ প্রবণতা প্রতিরোধে যে-কোনো ধরনের ভয়-ভীতি ও স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে থেকে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জনগণের কাছে সরকারের পাশাপাশি দাতা সংস্থার ওপর জনগণের আস্থা বাড়াবে। স্বচ্ছতার ঘাটতি হলে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সুযোগসন্ধানী, মধ্যস্বত্ত্বভোগী ও দুর্নীতিপ্রবণ স্বার্থান্বেষী মহলের পারস্পরিক যোগসাজশের ফলে ‘দুর্নীতির মহোৎসব’ সৃষ্টির ঝুঁকি রয়েছে।”
টিআইবি মনে করে কোভিড-১৯ উদ্ভূত মহাসংকট সমগ্র বিশ^কে এক অভূতপূর্ব সমস্যাসংকুল পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। আর এই কারণেই সকল পর্যায়ে শুদ্ধাচার নিশ্চিত করা আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, আর এক্ষেত্রে সরকার ও অন্য সকল অংশীজনের পাশাপাশি দাতা সংস্থাসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, টিআইবি এই প্রত্যাশা করছে। # প্রেস বিজ্ঞপ্তি ।