দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ১৮ বছরের নিচে সবাইকে শিশু হিসেবে আখ্যায়িত করার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনার সময় এসেছে। তিনি বলেন, আমি যখন এসএসসি পাস করেছি তখন বয়স ছিল ১৫ বছর। বর্তমানে যারা নিয়মিত পড়াশোনা করে, ১৮ বছর বয়সে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়।
আজ বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মধুবাগে বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কমপ্লেক্স অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। কিশোর অপরাধ দমনে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের আওতায় ‘সবার হোক একটাই পণ, কিশোর অপরাধ করবো দমন’ শীর্ষক টিভিসির উদ্বোধন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের মনে হয় ১৮ বছরের এ সময়সীমা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার সময় এসেছে। আন্তর্জাতিক একটি আইনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় সমন্বয় করে এটি করা হয়েছে। কিন্তু এর ফলে কিশোর অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বেগ পেতে হচ্ছে।
কিশোররা নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমাদের শঙ্কার বিষয় ছিল কোভিডকালীন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে, সবাই বসে থাকবে। তবে এই সময়ে কিশোরদের নিয়ে যে শঙ্কাটা ছিল ততখানি হয়নি, আমাদের দেশ অনেক দেশের তুলনায় ভালো আছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। তিনি বলেন, এটি ধরে রাখার প্রথম শর্ত হচ্ছে নিরাপত্তা।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ-র্যাব, শিক্ষকসমাজ তার কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারপরও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি কেন? বিষয়টি নিয়ে খেয়াল না করলে আমাদের সন্তানকে হারিয়ে ফেলব, দেশ-জাতির সবাই নিগৃহীত হবে। সমাজের শাসন যদি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে না পারি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যতই কড়াকড়ি হোক আমরা হারিয়ে যাব।
সন্তানদের বিষয়ে পরিবারকে পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিন। তাদের সঙ্গে কথা বলুন। সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কি করছে খেয়াল করুন। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। তবে সন্তানদের প্রতি যদি খেয়াল না রাখেন এটি আমরা কখনই পারবো না।
একই অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, এক সময় আট বছর পর্যন্ত বয়সীদের শিশু ধরা হতো। কিন্তু পরে কিশোর আইন হালনাগাদ করা হয়। এখন ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু ধরা হয়। আইন পরিবর্তনের ফলে যখন একজন পূর্ণ যুবকের পর্যায়ে পৌঁছে যায় তাকেও শিশু ধরা হয়।
ফলে কিশোর অপরাধের বিরুদ্ধে যেভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা সেভাবে করা হচ্ছে না। তাদের ক্ষেত্রে বিচার পদ্ধতি, গ্রেফতার পদ্ধতি সবকিছুই আলাদা। তাদের গ্রেফতারের সঙ্গে সঙ্গে প্রফেশন অফিসারের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানান আইজিপি।
তিনি বলেন, প্রফেশন অফিসাররা কাজ করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায়। আমরা কাজ করি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায়। আমরা তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের চেষ্টা করে যাচ্ছি। এছাড়া প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রফেশন অফিসার না থাকার বিষয়টিও রয়েছে।
কিশোর অপরাধীদের গ্রেফতারের পর জেলে পাঠানো যাবে না, সংশোধনগারে পাঠাতে হয়। সেই সংশোধনাগারের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয় বলে জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন প্রশ্ন রেখে বলেন, কারা কিশোরদের অপরাধী বানাচ্ছে, তাদের হাতে কারা মাদক তুলে দিচ্ছে, তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অপরাধ শুধু নিয়ন্ত্রণ নয়, প্রতিরোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের সমাজ বিজ্ঞানীদের এগিয়ে আসতে হবে।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে ছোটদের সঙ্গে বড়রাও থাকে। ছোট-বড় মিলে বিরোধ হয়, পরে আলাদা গ্রুপ সৃষ্টি হয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মারামারির মতো ঘটনা ঘটে। কিশোর অপরাধ দমনে সচেতনতা কার্যক্রম শুরু হয়েছে মানে এই নয় যে, অভিযান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। যদি কেউ সচেতনতার মাধ্যমে সুপথে না আসে, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা চলমান থাকবে। #