দূরবীণ নিউজ ডেস্ক: ছবি :
বাংলাদেশের বহুল আলোচিত কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্সে ১২ বস্তায় ,দুই কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৮৯ টাকা জমা পড়েছে। এ ছাড়াও চার কেজির মতো স্বর্ণ, রূপা এবং বিস্তর বিদেশি মুদ্রা পাওয়া গেছে।
মসজিদের পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা বলছেন, আজ শনিবার (১৯ জুন) সকাল ৯টার দিকে দুই শতাধিক মানুষ ১২ বস্তায় পূর্ণ এসব মুদ্রা গুনতে শুরু করেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন তত্ত্বাবধানে বিকেল নাগাদ গণনা শেষে দেখা যায়, সেখানে ছিলো ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৮৯ টাকা। আরো ছিলো প্রায় চার কেজির মতো সোনা ও রূপার গহনা। এ ছাড়া বিদেশি মুদ্রা।
তবে এসব মুদ্রার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলো ভারতীয় রুপি। আরো পাওয়া গেছে ডলার, ইউরো, সৌদি রিয়েল, ইয়েন, দিনার ইত্যাদি বিদেশি মুদ্রা। তবে বিদেশি মুদ্রার সঠিক পরিমাণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি এই মসজিদের সিন্দুক থেকে দুই কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, তিনমাস পরপর দানবাক্সগুলো খোলার কথা থাকলেও এবার খোলা হলো প্রায় পাঁচ মাস পর। শেষবার গত জানুয়ারি মাসেও চার মাস পর দানবাক্স খোলা হয়েছিল।
মিস ইয়াসমিন বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এই বিলম্ব।
আজ শনিবারের অর্থ গণনায় অংশ নিয়েছেন ১২৭ জন ছাত্র, ৫২ জন ব্যাংক কর্মকর্তা ও মসজিদ কমিটির ৩৩ জন সদস্য।
পাগলা মসজিদ কী :
কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে পাগলা মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদ কেন্দ্র করে রয়েছে একটি ধর্মীয় কমপ্লেক্স।
এই মসজিদের গোড়াপত্তনের সময়সীমা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায় না। তবে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: মজিবুর রহমান বলছেন, ‘যতদূর জানতে পাওয়া যায়, অনেক দিন আগে একজন পাগলা সাধক এখানে অবস্থান করতেন। তিনি সেখানেই মারা যান। পরে ওইখানে মসজিদ হয় আর সেটার নামকরণ হয় পাগলা মসজিদ।’
মো: মজিবুর রহমান বলছিলেন, মসজিদটিতে মুসলমানদের পাশাপাশি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও দান করেন।
জনশ্রুতি আছে, এখানে মানত করলে তাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। এই কারণে দেখবেন দুই তিন মাস পরপর এখানকার সিন্দুক ভরে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের জেলা তথ্য বাতায়ন বলে পরিচিত ওয়েবসাইটে মসজিদটি সম্পর্কে বলা আছে, ‘আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত পাগলা মসজিদটি বিভিন্ন ধরণের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে খ্যাত।
জনশ্রুতি আছে যে, পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদের কাছে স্থিত হন এবং তাকে ঘিরে আশপাশে অনেক ভক্তকূল সমবেত হন।
ওই পাগলের মৃত্যুর পর তার সমাধির পাশে পরবর্তীতে এই মসজিদটি গড়ে উঠে তাই কালক্রমে এটি পাগলা মসজিদ নামে পরিচিত হয়। মসজিদটি শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীর কাছেই নয়, সকল ধর্মাবলম্বীর কাছে অত্যন্ত পবিত্র ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত’।
মসজিদ থেকে পাওয়া অর্থের কী কাজ:
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ফরিদা ইয়াসমিন গণমাধ্যমকে বলছেন, ১৯৯৭ সাল থেকে এই মসজিদটি ওয়াকফ’র আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। তখন থেকে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে মসজিদের সিন্দুক খুলে টাকা গণনা শুরু হয়েছে।
তিনি আরে বলেন, ‘এখানে একটি এতিমখানা রয়েছে, সেই এতিমখানার খরচ এই টাকা থেকে চালানো হয়। এছাড়া মসজিদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এই অর্থে চলে। ক্যান্সার, কিডনি রোগে আক্রান্ত দরিদ্র ব্যক্তিদেরও এই তহবিল থেকে সাহায্য দেয়া হয়।
এই বছর এই তহবিল থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক, যারা করোনা রোগীদের সেবায় কাজ করেছেন, তাদের অনুদান দেয়া হয়েছে।
মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানবাক্সের টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা হয়। সেখান থেকে অনুদান ও সহায়তায় খরচ করা হয়।
# সূত্র : বিবিসি