দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
করোনার মধ্যেও তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে গণহত্যার বর্ষপূর্তিতে এবং জাতীয় নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। চীনা সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের প্রতিবাদ জানাতেই হংকংএ রাস্তায় নামলো জনতা।
প্রশাসনের নির্দেশ ছিলো, ৮জনের বেশি লোক জমায়েত হতে পারবেন না। করোনার বিপদের কথা বলে তারা এই নির্দেশ জারি করেছিলো। কিন্তু সেই নির্দেশের তোয়াক্কা না করে হংকং-এ হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামলেন। অনেকেই কালো পোশাক পরেছিলেন। হাতে ছিলো জ্বলন্ত মোমবাতি। হংকং পুলিশের যাবতীয় ব্যারিকেড সরিয়ে দিয়ে তাঁরা যান ভিক্টোরিয়া পার্কে মূল প্রতিবাদস্থলে। পুলিশ অবশ্য কোনও বলপ্রয়োগ করেনি।
১৯৮৯ সালের ৪ জুন বেজিং-এর তিয়ানআনমেন চত্বরে গণতন্ত্রপন্থী হাজার হাজার ছাত্র, যুবর ওপরে নির্বিচারে গুলি চালায়, কামান থেকে গোলাবর্ষণ করে চীনের সেনা। কয়েক হাজার ছাত্রের মৃত্যু হয়েঠি। গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলেন করছিলেন ছাত্ররা। সেই গণহত্যার প্রতিবাদেই ৪ জুন রাস্তায় নামেন হংকং-এর মনুষ।
হংকং-এও বেশ কিছুদিন ধরে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন চলছে। গতমাসে হংকং-এর আইনসভাকে এড়িয়ে চীনের পার্লামেন্ট জাতীয় নিরাপত্তা আইন করেছে। সেখানে আন্দোলন, প্রতিবাদ রুখতে আরও কড়া ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। এই আইন নিয়ে হংকং-এর গণতন্ত্রপন্থীরা রীতিমতো চিন্তিত।
তাই এ বার ৪ জুনের প্রতিবাদ হয়েছে তিয়ানআনমেন স্কোয়ারের গণহত্যা ও জাতীয় নিরাপত্তা আইন দু’য়েরই বিরুদ্ধে। ভিক্টোরিয়া পার্কের বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, এই আইন চালু হয়ে গেলে তারা আর এই ধরনের বিক্ষোভ দেখাতে পারবেন কি না সন্দেহ। এক বিক্ষোভকারীর কথায়,‘হংকং-এ বিরোধ ও প্রতিবাদ থামাতেই এই আইন চালু করা হচ্ছে। চীনের শাসকরা আর রাজনৈতিক বিরোধ বরদাস্ত করতে চাইছেন না।’
বিক্ষোভের অন্যতম আয়োজক লি চেউক ইয়ান বলেছেন,‘আমরা আশা করি, বিশ্বজুড়ে লোক আমাদের সমর্থন করবেন, আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। আমাদের মূল্যবোধকে মর্যাদা দেবেন।’
তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে একটা বিবৃতি দিয়েছে অ্যামেরিকা। তাতে বলা হয়েছে, চীনের মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা, ধর্মীয় বিশ্বাস পালন করা, বিক্ষোভের অধিকার রক্ষার জন্য যে আন্দোলন করছে, অ্যামেরিকা তার পাশে আছে।
অন্যদিকে হংকং-এর পার্লামেন্টে প্রতিবাদের মধ্যেই পাস হয়েছে জাতীয় সঙ্গীত বিল। বিলের বিষয়বস্তু হলো, চীনের জাতীয় সঙ্গীতের কোনো অসম্মান করা চলবে না। করলে সেটা অপরাধ বলে গণ্য হবে। গণতন্ত্রপন্থী দুই সাংসদ এর প্রতিবাদ করেছিলেন। তাঁরা দুর্গন্ধযুক্ত তরল নিয়ে এসেছিলেন। রক্ষীদের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তির সময় তা মেঝেয় পড়ে যায়।
বিক্ষোভ হয়েছে তাইওয়ানেও। তাইপেই-এর লিবার্টি স্কোয়ারে তিন হাজার লোক বিক্ষোভ দেখান। সকলের হাতে ছিলো মোমবাতি। জুন মাসের ৪ তারিখে গণহত্যা হয়েছিলো বলে তারা ৬৪ সেকেন্ড মোমবাতি ওপরে তুলে প্রতিবাদ জানান। এডিথ চুং আগে হংকং-এ ছিলেন। এখন তাইওয়ানে চলে এসেছেন।
তিনি জানিয়েছেন,‘কতজন বিক্ষোভ দেখালেন, সেটা বড় কথা নয়। আসল কথা হলো, হংকং-এর মতো আমরাও ওই ভয়ঙ্কর ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ # সূত্র : ডয়চে ভেলে