দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের হিংস্র থাবায় থেমেগেছে রাজধানীতে মশক নিধন অভিযান, বেড়েছে মশার উৎপাত। ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম দম্পতি এবং প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ডজনখানিক কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যারফলে মাঠে ময়দানের চলমান কার্যক্রম থেমে গেছে।
বিশেষ করে নগরীতে মশক নিধন কার্যক্রমের চলমান অভিযান ঢাকার দুই সিটিতেই থেমে গেছে। আর এই সুযোগে রাজধানীতে হঠাৎ মশার উৎপাত আবার বাড়তে শুরু করেছে।নগরীর বস্তি থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাটবাড়িসহ সব জায়গায় সন্ধ্যার আগেই ছোট ছোট মশার উৎপাত বাড়ছে।
খোজঁ নিয়ে জানা যায়,কয়দিন আগেও নগরীতে মশার উৎপাত ছিল না।ফলে দুই মেয়রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন নগরবাসী। মশা নিয়ন্ত্রণে উৎপত্তিস্থলে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হতো। পাড়া-মহল্লার অলিগলিতেও সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মীদের মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যেত। কিন্তু সম্প্রতি মশার ওষুধ ছিটাতে কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
তবে মশার উৎপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন নগরবাসীরা। মহামারি করোনাভাইরাস আতঙ্কের সঙ্গে নতুন করে যোগ হচ্ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক।গত কয়েকদিন থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে এবং মশার উৎপত্তিস্থলে মশার ওষুধ না ছিটানোর ফলে মশার উপদ্রব বেড়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।
বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। তার মধ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১৫ জন ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালে একজন ভর্তি রয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে সাতজন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তার মধ্যে ঢাকা শিশু হাসপাতালে দুইজন, বিজিবি সদর হাসপাতাল পিলখানায় দুইজন ও বেসরকারি হাসপাতালে তিনজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।
তাদের তথ্যমতে,গত জানুয়ারি থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৫০৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন।এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪৮৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর তথ্যমতে,গত ৮ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ২১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এ সময়ে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৮ অক্টোবর-দুইজন, ৯ অক্টোবর- একজন, ১০ অক্টোবর- চারজন, ১১ অক্টোবর- সাতজন, ১২ অক্টোবর- তিনজন, ১৩ অক্টোবর- দুইজন এবং ১৪ অক্টোবর- সাতজন।
সূত্র আরও জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত মাসওয়ারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা যথাক্রমে জানুয়ারিতে-১৯৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে- ৪৫ জন, মার্চে-২৭ জন,এপ্রিলে- ২৫ জন, মে- ১০ জন,জুনে- ২০জন, জুলাইতে-২৩ জন, আগস্টে-৬৮ জন, সেপ্টেম্বর- ৪৭ জন এবং চলতি অক্টোবরে- ৪২ জন।
বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটির মেয়রের এপিস ফরিদ উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন,মশক নিধন কার্যক্রমের বিশেষ অভিযান আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। কারণ মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা,প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং বেশ কয়জন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত। তবে করোনায় আক্রান্তরা এখন আর আশঙ্কাজনক অবস্থা নেই। মেয়র মহোদয়সহ সবাই অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠছেন।
তিনি বলেন, সাময়িকভাবে মশক নিধনের চলমান অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সর্তকতার সাথে চলতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সবাই সুস্থ্ হবার পর পুনরায় মশক নিধন অভিযান পুরোদমে চলবে।
অপরদিকে ঢাকাদক্ষিণ সিটির মেয়রের মুখপাত্র জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রসঙ্গে বলেন, তিনি নিজেও অনেকটা অসুস্থ। তবে আশঙ্কাজনক নন।
তিনি বলেন,ঢাকা দক্ষিণে প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ পকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম করোনায় আক্রান্ত, এরআগে প্রধান বর্জ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিন এবং প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। বর্তমানে তারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
তিনি মশক নিধনের বিশেষ বন্ধ কেনো এ বিষয়ে অবগত নন। তবে নগরীতে অবৈধ ক্যাবল অপসারণ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযান চলমান আছে বলে জাজন। #