দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
করোনাভাইরাসে চীনের বাইরে মারা যাচ্ছে ১২৬ শতাংশ বেশি। এ দিকে আগামী মাসে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাক্সিনের প্রথম পরীক্ষা হবে লন্ডন ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল এবং যুক্তরাষ্ট্রের দুই ওষুধ কোম্পানিতে।
ইমপেরিয়াল কলেজের বিজ্ঞানীরা গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে প্রাণিদেহে করোনা ভ্যাক্সিনের পরীক্ষা চালিয়ে আসছিলেন। মধ্য জানুয়ারিতে চীনা বিজ্ঞানীদের দেয়া ভাইরাসটির জেনেটিক তথ্য দেয়ার পর থেকেই তারা ভ্যাক্সিন আবিষ্কারে লেগে গেছেন।
একই সাথে সার্স ভাইরাসের ডিএনও এবং এর ভ্যাক্সিনের নমুনাকেও তারা কাজে লাগাচ্ছেন। ভ্যাক্সিনটি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যবহারের আগে তারা এপ্রিলের মধ্যে পরীক্ষা করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের যে দু’টি ওষুধ কোম্পানি কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনের পরীক্ষা করবে এদের নাম হলো ‘মডার্না ও ইনোভিও’।
উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কোনো ওষুধ অথবা ভ্যাক্সিন নেই। হাসপাতালে চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপনা চিকিৎসা দিয়ে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা করেন আক্রান্তের শরীরে প্রেিতরাধ ক্ষমতা গড়ে না ওঠা পর্যন্ত।
এ সময় চিকিৎসকেরা আক্রান্তকে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন এবং চিকিৎসা কেবল হাসপাতালেই সম্ভব। গবেষকেরা জানিয়েছেন, মানুষের মধ্যে নিম্মমাত্রায় পরীক্ষায় সফলতা পাওয়া গেলে তারা পরে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সত্যিকারের পরীক্ষা চালাবেন।
সবগুলো পরীক্ষা সফল হলে আগামী বছর থেকে ভ্যাক্সিনটি বাজারে ছাড়া হবে বলে ইমপেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক রবিন শাটক পডকাস্টে জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সব ধরনের ভ্যাক্সিন পরীক্ষার পর সফল হতে কমপক্ষে পাঁচ বছর লাগে। আবার ওষুধ কোম্পানিতে তৈরি করতে আরো এক থেকে দুই বছর লাগে। কিন্তু তারা স্বল্প সময়ের মধ্যেই করোনার ভ্যাক্সিন তৈরির চেষ্টা করছেন।
জানা গেছে, গত ৪ মার্চ চীনের উহানে মারা গেছে ৩৮ জন, কিন্তু বাইরের দেশগুলোতে সেদিনই মারা গেছে ৮৬ জন। উহানে যে ১৬টি হাসপাতাল বানানো হয়েছে করোনা চিকিৎসার জন্য সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে বলে চীনের হেলথ কমিশন জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনা সরকার ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে যে পদক্ষেপ নিয়েছিল তা কাজ করছে। এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী ৯৫ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ২০০-এর বেশি মানুষ মারা গেছে।
ডেইলি মেইল জানিয়েছে, চীনে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। সেখানে গত ৪ মার্চ করোনায় নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১১৯ জন। এর বেশির ভাগই আক্রান্ত হয়েছে হোবেই প্রদেশের উহানে, যেখান থেকে প্রথম করোনা ছড়িয়ে পড়ে।
দেশটির বেশির ভাগ প্রদেশে গত ৪ মার্চ কোনো আক্রান্তের তথ্য ছিল না। নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছে, গত ছয় দিনে সাংহাই প্রদেশে নতুন কোনো সংক্রমণের তথ্য নেই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, চীনে নতুন বছরের ছুটি বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাতিল এবং সরকারের চেষ্টা এবং আন্তঃপ্রদেশ ও শহরের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ায় চীনে এ সাফল্য এসেছে।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. বেঞ্জামিন কাউলিং নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে প্রথমবারের মতো ভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে চীনা সরকারের চেষ্টা কাজে লেগেছে।’ এ দিকে চীনের অস্থায়ী হাসপাতালের প্রধান সংবাদ সংস্থা এপিকে বলেছেন যে চলতি মার্চ মাসের শেষ দিকে এসব অস্থায়ী হাসপাতাল গুটিয়ে আনা হবে।
মোদির ব্রাসেলস সফর স্থগিত:
বাসস জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত-ইইউ সম্মেলনের জন্য তার নির্ধারিত ব্রাসেলস সফর স্থগিত করেছেন। করোনাভাইরাসের কারণে সম্মেলনটি বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
প্রাণঘাতী মহামারীটির ছোবলে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী তিন হাজারের বেশি লোক মারা গেছে ও ৯০ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছে।
গত ৫ মার্চ সরকারি সূত্রে বলা হয়, কৌশলগত অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদির ভারত-ইইউ সম্মেলনে যোগ দিতে ব্রাসেলস যাওয়ার কথা ছিল।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র গতকাল বলেন, ‘ভারত-ইইউ সম্মেলনের ব্যাপারে, উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে যে স্বাস্থ্য কর্র্তৃপক্ষ এই ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেয়ায়, দুইপক্ষের সম্মতিক্রমে পরবর্তী কোনো একটি সুবিধাজনক সময়ে সম্মেলনের দিনক্ষণ পুনঃনির্ধারণ করাটাই সঠিক হবে।’ #