দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
আগামী দুই মাসের মধ্যে ‘এস আলম গ্রুপের’ বিরুদ্ধে সরকারের অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগের নামে অর্থ স্থানান্তরের অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতএকই সঙ্গে বিদেশে অর্থ পাচার ঠেকাতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতা কেনো বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তার জবাব চেয়ে রুল জারি করেছেন।
রোববার (৬ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বে একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে সংশ্লিষ্টদের রুল জারিসহ এ নির্দেশনা দিয়েছেন। ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন উচ্চ আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিষ্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। পরে আদালত প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এ আদেশ জারি করেন।
রোববার ব্যারিষ্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন আদালতে সামনে পত্রিকার প্রতিবেদন তুলে ধরে শুনানিতে অংশ গ্রহণ করেন। ওই সময় দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ শুনানিতে অংশ গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য,এর আগে গত ৪ আগস্ট এক জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে ‘‘এস আলম‘স আলাদিন ল্যাম্প‘স’’ (এস আলমের আলাদিনের চেরাগ) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আদালতের সামনে ওই প্রতিবেদনটি তুলে ধরারপর,আদালত আমলে নেন।এরপর শুনানিকালে আদালত বলেন, ‘বিদেশে অর্থপাচারের ঘটনায় দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও সংক্ষুব্ধ’।
পরে এস আলম গ্রুপের বিদেশে অর্থ পাঠানোর অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুদকসহ সংশ্লিষ্টদেরকে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই অর্থ পাচার ঠেকাতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
আদেশের পরে আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন সাংবাদিকদের বলেন, দেশের সব আইন অমান্য করে দেশের বাইরে বিপুল অংকের টাকা নিয়ে গেছেন এস আলম গ্রæপের মালিক সাইফুল আলম এবং তার স্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে আমি আদালতের নজরে আনি। তখন আদালত এ বিষয়ে রুল জারির পাশাপাশি অন্তর্র্বতী আদেশ দিয়েছেন।
আদেশে দুই মাসের মধ্যে এ ঘটনার অনুসন্ধান করে বিএফআইইউ, দুদক এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন। পাশাপাশি এই অর্থ পাচার ঠৈকাতে তাদের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রতিবেদনের সত্যতা সম্পর্কে হলফনামা দাখিল করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এস আলম গ্রæপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যদিও বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো অনুমতি তিনি নেননি।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বাইরে বিনিয়োগের জন্য এ পর্যন্ত ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিলেও চট্টগ্রামভিত্তিক বিশাল এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম সেই তালিকায় নেই। কাগজপত্রে আরও দেখা যায়, গত এক দশকে সিঙ্গাপুরে এস আলম অন্তত দুটি হোটেল, দুটি বাড়ি, একটি বাণিজ্যিক স্পেস এবং অন্যান্য যে সম্পদ কিনেছেন এবং সেখানেও বিভিন্ন উপায়ে কাগজপত্র থেকে তার নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশ থেকে ৪০ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে বিনিয়োগের জন্য নেওয়া হয়েছে।
তবে, এই পরিমাণ অর্থ ২০০৯ সালের পর সিঙ্গাপুরে এস আলমের কেবল দুটি হোটেল ও একটি বাণিজ্যিক স্পেস কেনা ৪১১ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের দশ ভাগের এক ভাগ মাত্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিতে আরও দেখা যায়, এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বৈধ উপায়ে সিঙ্গাপুরে এক লাখ ৭ হাজার মার্কিন ডলার পাঠিয়েছে, যার মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানও এস আলমের মালিকানাধীন নয়। #কাশেম