দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
ভুয়া প্রতিষ্ঠানের (কাগুজে) নামে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ১৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের (এসবিএসি) সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন, ওই ব্যাংকের পরিচালক ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেনসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুই মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
প্রথম মামলায় রাফি মাহি কর্পোরেশন নামের কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ১২ কোটি ১১ লাখ টাকা আত্মসাত ৮ জন ও দ্বিতীয় মামলায় ৬ কোটি ৮ লাখ টাকা আত্মসাতে ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে দুই মামলায়ই আমজাদ হোসেনকে আসামি করা হয়েছে।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) দুদক উপ পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯/ ৪২০/ ৪৬৭/ ৪৬৮/ ৪৭১/ ১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (২,৩) ধারায় দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ১১ ও ১২।
গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপ পরিচালক মুহাম্মদর আরিফ ছাদেক।
দুদকে দায়ের করা প্রথম মামলার ৮ আসামী হলেন, সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কর্মাস ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন, পরিচালক ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেন, রাফি-মাহি কর্পোরেশনের মালিক এ কে এম আসিফ উদ্দিন, ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ শরফুদ্দিন, ফার্স্ট অ্যাসিটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. রুমন-উল-ইসলাম, এক্সিকিউটিভ অফিসার ইশতিয়াক আহমেদ, মো. তানজির উদ্দিন চেীধুরী ও সিনিয়র তাসরিমা নাহিদ। এ মামলার অভিযোগে বলা হয়, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের বিজয়নগর (তৎকালীন মতিঝিল) শাখার ব্যবস্থাপকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক প্রতারণার মাধ্যমে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে কোনো রূপ যাচাই বাছাই ছাড়াই রাফি মাহি করপোরেশন নামে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১২ কোটি ১১ লাখ টাকা ঋণ অনুমোদন করেন।
দ্বিতীয় মামলায় ৬ আসামী হলেন, সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কর্মাস ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ শরফুদ্দিন, ফার্স্ট এক্সকিউটিভ অফিসার মো. তানজির উদ্দিন চেীধুরী, সিনিয়র অফিসার মো. বুলবুল ইফতেখার আলী, আল-আমিন কর্পোরেশনের মালিক মো. মাসুদুর রহমান ও জামাল আহমেদ। এ মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, আসামীরা সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কর্মাস ব্যাংক লি: এর মতিঝিল শাখার সাবেক ব্যবস্থাপকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণার মাধ্যমে ভূয়া এসওডি-ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে উক্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম আমজা েেহাসেনের নিদের্শে প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই এস, এম আমজাদ হোসেন ৬ কোটি ৮ লাখ টাকা উত্তোলন পূর্বক আত্মসাত করেন। পরবর্তীতে ওই অর্থ স্থানান্তর ও রুপান্তরের মাধ্যমে পাচার করেন।
দুদকের সূত্র মতে,এর আগে ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর আমজাদ হোসেনসহ ৭ জনের মামলা দায়ের করে দুদক। ওই মামলায় ভুয়া ভিজিট প্রতিবেদন ও ভুয়া স্টক লট প্রস্তত করে খুলনা বিল্ডার্স লিমিটেড নামীয় কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ওই টাকা আত্মসাত করে আসামিরা।
দেশে-বিদেশে বিভিন্ন কোম্পানি খুলে ‘বিপুল পরিমাণ অর্থ’ আত্মসাতের অভিযোগে এস এম আমজাদ হোসেনের বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এর আগেও তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ জমা হয় দুদকে। এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই আমজাদ হোসেন, ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রফিকুল ইসলাম ও সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। যদিও জিজ্ঞাসাবাদে অধিকাংশ অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
বিভিন্ন সময়ে দুদকে আসা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, আমজা হোসেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে- বেনামে দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন কোম্পানি খুলে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের খুলনা সদর ও কাটাখালী শাখা ব্যবহার করে আমদানি-রফতানি ও ঋণের আড়ালে নানাবিধ দুর্নীতি, অনিয়ম, জালিয়াতির মাধ্যমে আমানতকারীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
খুলনা অ লের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান লকপুর গ্রুপের মালিক এস এম আমজাদ হোসেন। তার মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- লকপুর ফিশ প্রসেস কোম্পানি লিমিটেড, বাগেরহাট সিফুড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, শম্পা আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড, রূপসা ফিশ অ্যান্ড অ্যালাইড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, মুন স্টার ফিশ লিমিটেড।
এছাড়া খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, খুলনা এগ্রো এক্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড, ইস্টার্ন পলিমার লিমিটেড, মেট্রো অটো ব্রিকস লিমিটেড, খুলনা বিল্ডার্স লিমিটেডসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ শিল্প গ্রুপে।
২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে আমজাদ হোসেনের নামে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে চিঠি দেয় দুদক। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এস এম আমজাদ হোসেন, স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ ও মেয়ে তাজরির বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক। #