দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল, তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রায় ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করছে দুদক।
দুদক পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য ১০ নভেম্বর গণমাধ্যমকে বলেছেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে যে কোন সময় দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন।’
এদিকে অভিযোগ রয়েছে,অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে শ্যালিকা জেসমিন প্রধানকে মালিক দেখিয়ে ‘লিলাবালি’ নামে একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল। ওই প্রতিষ্ঠানের আড়ালে জেসমিনের পাঁচটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ২০১২ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত ১৪৮ কোটি টাকা পাচার করেন তিনি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
‘‘জেসমিনের বয়স ২৩ বছর। তাকে মালিক দেখিয়ে সেলিনা ইসলাম এমপি ও শহিদ ইসলাম পাপুল নিজেদের অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের বৈধতা দেওয়ার জন্য ‘লিলাবালি’ নামে কাগুজে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বিভিন্ন ব্যাংকে জেসমিনের নামে প্রায় ৪৪টি অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে। যেখানে শুধু এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকেই রয়েছে ৩৪টি এফডিআর হিসাব। পাপুল এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। তাই এই সুবিধা নিতে তার কোনো বেগ পেতে হয়নি।’’
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, জেসমিন তার এফডিআর হিসাবের ২ কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৭ টাকার কোনো উৎস দেখাতে পারেননি। যে কারণে অবৈধ সম্পদের অভিযোগে আরও মামলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে।
অবৈধ উপায়ে অর্জিত জেসমিন প্রধানের নিজ নামে ২০টি এফডিআরে এক কোটি টাকা, সেলিনা ইসলামের নামে ২৯৫টি এফডিআরে ২০ কোটি ৮৬ কোটি টাকা, শহিদ ইসলাম পাপুলের নামে ২৩টি এফডিআরে ২ কোটি ১৮ কোটি টাকার সন্ধান পেয়েছে দুদক।
আর পাপুলের মেয়ে ওয়াফা ইসলামের ৪১টি এফডিআরের ২ কোটি ২৯ লাখ টাকাসহ মোট ২৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা জেসমিন প্রধানের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের হিসাবে লগ্নি করে ২৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার ওভার ড্রাফটের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ১৪৮ কোটি টাকা পাচার করেছেন পাপুল।
এসব ঘটনায় পাপুল, তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুদক।
এরআগে গত ২২ জুলাই পাপুলের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে সেলিনা ও জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সেলিনা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমাদের কোনো গোপন সম্পদ নেই, অবৈধ সম্পদও নেই। যা আছে, তার বিবরণ দুদককে দিয়েছি। আমরা আইনের পক্ষে। এই তদন্তে দুদককে সব ধরনের সহযোগিতা করবো।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পাপুল। এরপর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কোটায় পাওয়া সংরক্ষিত এক আসনে তার স্ত্রী সেলিনাও এমপি নির্বাচিত হন।
প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন পাপুল, যেখানে তার বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে। এছাড়া, পাপুলের মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপে প্রায় ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন বলে কুয়েতে বাংলাদেশি কমিউনিটির ধারণা। #