দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মহামারী নিয়ন্ত্রণে এনে আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে চীনের মানুষ। এতদিন প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল চীন।
তবে ধীরে ধীরে, সতর্কতার সাথে। এতে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে নভেল করোনাভাইরাস সৃষ্ট প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি। খবর এএফপি’র ।
গত ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে নভেল করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়। বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেয়া এ ভাইরাসে চীনে মারা গেছে তিন হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ। আর আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৮১ হাজার। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশটিতে কয়েক সপ্তাহ সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
লকডাউন করে দেয়া হয়েছিল বড় বড় শহর। এসব নজিরবিহীন পদক্ষেপের সুবাদে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে নভেল করোনাভাইরাসের অভ্যন্তরীণ সংক্রমণ শূন্যের পর্যায়ে নেমে এসেছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে আবার খুলতে শুরু করেছে কয়েক সপ্তাহ ধরে বন্ধ থাকা রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। রাস্তাঘাটে ধীরে ধীরে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। পার্কে-চত্বরে আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ।
নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে আসার পর ১০ মার্চ উহান সফরকালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঘোষণা দেন, তার দেশ ধারাই পাল্টে দিয়েছে। দেশটির শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হুবেই বাদে বাকি অঞ্চলগুলোয় ৯০ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম আবার শুরু করেছে।
তবে কোমা ছেড়ে জীবনযাত্রা পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়া এখনো অনেক দূরের পথ। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে অনেক খাবারের দোকানে মুখোমুখি বসে খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটিতে খুব একটা সহজ নয়। বেশির ভাগ স্থানেই প্রবেশের আগে মাস্ক পরিধান ও তাপমাত্রা যাচাই করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বেইজিংয়ের বাসিন্দা ওয়াং হুইসেনসহ ডজনখানেক নারী গানের তালে তালে একটি পার্কে সম্মিলিতভাবে নাচ চর্চা করেন। এ ধরনের নাচ দেশটিতে জাতীয়ভাবে স্বীকৃত এবং এসব নারী ‘ড্যান্সিং আন্টিস’ নামে পরিচিত।
নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে আসায় তারা আবার পার্কে আসতে শুরু করেছেন। তবে প্রত্যেককে নিজেদের মাঝে তিন মিটারের দূরত্ব রেখে নাচ চর্চা করতে হচ্ছে।
৫৭ বছর বয়সী ওয়াং বলেন, মহামারীর সময়ে সবাই খুব উদ্বিগ্ন ও ভীত ছিল। তাই আমরা সবাই এখন রিলাক্স করতে চাই। তিনি আরো বলেন, সবাই এখন সতর্ক এবং সংক্রমণ এড়াতে একে অন্যের সাথে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখছে।
দাফতরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ঝেং মিন বলেন, আমি খুব শঙ্কিত ছিলাম। ভীতিটা স্থায়ী ছিল। তবে এখন সব ঠিক আছে।
নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুহার কমে এলেও চীনে এ ভাইরাসের প্রকৃত আঁচড় আরো অনেক গভীর। বেকারত্ব ও দেউলিয়াপনার উল্লম্ফনে এ ভোগান্তি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আসন্ন দিনগুলোয় ভাইরাসের ক্ষয়ক্ষতি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
কাই কিঝেন নামের সাংহাইয়ের এক মুচি দোকানি বলেন, গত বছরের শেষ দিকে মহামারীর আগে আমার ব্যবসা খুব ভালো চলছিল। কিন্তু এখন আমাকে আর সকালে আসতে হয় না। আবার কাজ শেষ হয়ে যায় ৩টার আগে, কিছুই করার থাকে না। # কাশেম