দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) ই-অরেঞ্জের লেনদেনের বিপরীতে রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে প্রতিবেদন না দেওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেছেন, ‘উনি (এনবিআর চেয়ারম্যান) কেন আদালতের আদেশ ফলো (অনুসরণ) করছেন না? কারণ কী? উনি নিজেকে কি সম্রাট ভাবেন? যে ব্যাখ্যা ও তথ্য চাওয়া হয়েছে, তা দাখিল করতে এনবিআরের চেয়ারম্যানকে বলবেন। আমরা লাস্ট চান্স দিলাম।’
এরপর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি জানাবো।’ পরে এ বিষয়ে শুনানি ও আদেশের জন্য আগামী ২৭ মার্চ দিন ঠিক করেন আদালত। ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর বিএফআইইউ, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়। আইজিপির প্রতিবেদন সুস্পষ্ট নয় এবং দুদকের প্রতিবেদন সন্তোষজনক নয় উল্লখ করে সেদিন আদালত নতুন করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশসহ আদেশ দেন।
রোববার (৫ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বে এ কথা বলেন। আদালতে এদিন রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম. আবদুল কাইয়ুম লিটন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শামীম খালেদ আহমেদ।
গত ২৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট শুনানি নিয়ে ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক ও বরখাস্ত হওয়া বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ এবং ই-অরেঞ্জের লেনদেনের বিপরীতে রাজস্ব আদায় বিষয়ে জানাতে স্বরাষ্ট্র সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বিবাদীদের নির্দেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি শুনানিতে ওঠে।
শুনানিতে এ কে এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়ে কার্যক্রম চলছে। ওই ঘটনায় করা মামলার তদন্ত চলছে। গত বৃহস্পতিবার শেষ বেলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাগজপত্র হাতে এসেছে, যে কারণে হলফনামা করা হয়নি। আগামী সপ্তাহে দাখিল করা যাবে। তবে পত্রিকায় এসেছে, জামিন নিয়ে ভারতের কারাগার থেকে সোহেল রানা পালিয়ে গেছেন। ভারত থেকে হালনাগাদ তথ্য নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইজিপির প্রতিবেদন একই ধরনের।’
রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ুম লিটন বলেন, ‘আদেশ প্রতিপালনের জন্য সময় চাইলে আদালত সময় দিতে পারেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তথা এনবিআরের চেয়ারম্যান প্রতিবেদন দাখিল করেননি। শেখ সোহেল রানার (বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক) বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির জন্য ইন্টারপোল কিছু তথ্য জানতে চেয়েছে, যা পরে দেওয়া হয়নি বলে রাষ্ট্রপক্ষের হলফনামায় দেখা যাচ্ছে।’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘শেখ সোহেল রানার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি হয়েছে, যার নম্বরও উল্লেখ করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রিপোর্ট পাইনি।’
এসময় আদালত বলেন, ‘এনবিআরকে জানিয়েছিলেন কি?’ হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বারবার অনুরোধ করা হয়েছে, গুরুত্ব দেখা যাচ্ছে না।’ আদালত বলেন, ‘এনবিআরেরটিসহ দুটি প্রতিবেদন একসঙ্গে দেবেন।’
একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘এবিআরের চেয়ারম্যান কে?’ তখন আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।’ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আমরা লাস্ট চান্স দিলাম। এটি দেখুন। বলে দেবেন, এবার প্রতিবেদন না দিলে ডাকা হবে। রেড নোটিশ জারি না হয়ে থাকলে, জারির ব্যবস্থা বা কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা দেখবেন। যে তথ্য চাওয়া হয়েছে, তা দিতে এনবিআরের চেয়ারম্যানকে বলবেন। এ দুটি দেন। বিষয়টি ২৭ মার্চ কার্যতালিকায় আসবে।’
পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার দাবি করে ই-অরেঞ্জের ৫৪৭ জন গ্রাহকের পক্ষে তাদের ছয়জন প্রতিনিধি গত বছরের মার্চে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করে চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেদিন রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে জানায়, ‘ভারতে অনুপ্রবেশের কারণে শেখ সোহেল রানা তিন বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে প্রেসিডেন্সি কারেকশনাল হোম আলীপুর, ভারতে আটক ছিলেন। পত্রপত্রিকার খবরে দেখেছি, জামিন নিয়ে পরে সেখান থেকে সোহেল রানা পালিয়ে গেছেন। আর বিএফআইইউর পক্ষ থেকে ই-অরেঞ্জ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম-ঠিকানা ও ব্যাংক হিসাবের নম্বর উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।’ # কাশেম