দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের (বিশ্ব স্বাস্থ্য অনু বিভাগ) অস্বভাবিক ক্ষমতাবান অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগমের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ফেসবুকে’ প্রকাশিত বিপুল পরিমান অবৈধ সম্পদের তথ্য সত্যিই অবাক হবার মতো।
তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে গণমাধ্য কর্মীদের বলা হয়েছে কাজী জেবুন্নেছা বেগমের অবৈধ সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করা এবং পুরো বিষয়টির ওপর নজর রাখ হচ্ছেন। ফলে যে কোন নাগরিক কাজী জেবুন্নেছা বেগমের বিরুদ্ধে সুনিদিষ্ট তথ্য উপাত্ত দুদকের পাঠাতে পারবেন। এছাড়া দুদক নিজ উদ্যোগেও কাজী জেবুন্নেছা বেগমের বিরুদ্ধে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহে নেমেছেন বলে জানা যায়।
এখন দেখা যাক দুদকের বলিষ্ট অনুসন্ধান ও তদন্তে কাজী জেবুন্নেছা বেগমের বিরুদ্ধে কি বেরিয়ে আসে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক নাগরিক গভীর আগ্রহে অপেক্ষা রয়েছে দুদকের কি অ্যাকশন হয়।
সাংবাদিক রোজিনাকে হেনস্থা:
ছবি– সংগৃহিত
গত ১৭ মে (সোমবার) পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে প্রথম আলো অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম অমানবিক হেনস্তার শিকার হয়েছেন। রোজিনা ইসলামকে ‘তথ্য চুরি, অফিসিয়াল সিক্রেসি এ্যাক্টে’ অভিযোগ এনে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এখনো রোজিনাকে জামিন দেয়নি আদালত। সাংবাদিক রোজিনাকে হেনস্থ,তার বিরুদে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেন অতিরিক্ত সচিব জেবুন্নেছা বেগম। আর এই অমানবিক ঘটনার পর থেকেই অতিরিক্ত সচিব জেবুন্নেছার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু হয়েছে।
সাংবাদিক রোজিনাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা, মামলায় জড়িয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তীব্র প্রতিবাদ হচ্ছে। এমনকি জাতিসংঘ থেকেও নিন্দা জানানো হয়েছে। এর পরও সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন হয়নি আদালতে।
এদিকে গত ২০ মে (বৃহস্পতিবার) দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘যে কোনো সময় যে কোনো দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেলে এবং দুর্নীতির তথ্যগুলো সঠিকভাবে এলে দুদক তদন্ত করতে বাধ্য। এর জন্যই দুদক সৃষ্টি, আইনও এ জন্যই হয়েছে।’ এখন সঠিক তথ্য উপাত্ত দুদকের আসা মাত্রই কাজ শুরু হবে।
দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগমের বিরুদ্ধে কোনো দালিলিক প্রমাণ বা কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই দুদক এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টগুলো তাদের কাছে আসলে দুদক সেগুলো অনুসন্ধানের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করবেন। তখন দুদকের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাই তথ্য খুঁজে বের করবেন। এখন কেউ চাইলে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে পারবেন। সেটাও তাদের কাজে লাগবে।
দুদক কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক বলেন, ওই অতিরিক্ত সচিবের নামে কানাডায় একটি বাড়ি, লন্ডনে বাড়ি, ঢাকায় বাড়ি- এসব খবর তাদের নজরে আসছে। এ তথ্যগুলো সুনির্দিষ্টভাবে এলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনেক সময় দুর্নীতি হয়, দুর্নীতির পর সেটা বোঝাও যায়। কিন্তু অনুসন্ধানের সময় তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় না।
তিনি আরো বলেন, ‘দুদক এখন আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। দুদকের কাজে সরকারের হস্তক্ষেপ নেই। আমরা সঠিক তথ্য পেলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী অ্যাকশনে যাব।’ কাজী জেবুন্নেছা বেগমের এতো বিঘা ও বিদেশে সম্পত্তি এটা বললে হবে না। জমি থাকলে কোন জায়গায়, টাকা কোন ব্যাংকে এরকম সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে, আমরা খতিয়ে দেখব’।
এদিকে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় জেবুন্নেছার নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি, ব্যাংকে জমানো টাকার তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে। ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে, ঢাকায় তার নামে চারটি বাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে। একাধিক ব্যাংকে তার নামে-বেনামে শতকোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। গাজীপুরে তার নামে ২১ বিঘা জমি, কানাডায় তিনটি বাড়ি ও পূর্ব লন্ডনে বাড়ির তথ্যও উঠে এসেছে। এসব তথ্য দুদকেরও নজরে এসেছে।
তবে দুদকের একটি সূত্র বলছে, স্বাস্থ্য সচিবের ড্রাইভার ‘মালেকই’ বহুলতল ভবনসহ কয়েক কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক। অবৈধ সম্পদের অভিযোগে ড্রাইভার মালেক এখন কারাগারে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম অনেক ক্ষমতাবান। তার তো স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেশি থাকতেই পারে। দেখা যাক দুদকের অনুসন্ধানে কি বেরিয়ে আসে। #