দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
আর্থিক মোবাইল সেবাদানকারী (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদকে ডিজিটাল সেবাদানকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবী বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। নগদের কারিগরি সহযোগী থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিসের এক্সিম ব্যাংক থেকে নেওয়া ৩১৭ কোটি টাকার বকেয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারচ্ছে না ডাক বিভাগ। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে নগদের অ্যাকাউন্টের ঘাটতি পূরণে ডাক বিভাগকে ঋণ পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক পরিষেবা চালনার জন্য একটি অস্থায়ী লাইসেন্সই নগদ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস ও নগদ উভয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে রয়েছেন তানভীর আহমেদ মিশুক।

২০২১ সালের ফেব্রæয়ারিতে এক্সিম ব্যাংক থেকে নগদের গ্রাহকদের অর্থ জমা রাখা ‘ট্রাস্ট ফান্ডের’ বিপরীতে ৫০০ কোটি টাকার ঋণ নেয় থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস। এমএফএসের নিয়ম লঙ্ঘন করেই গ্রাহকদের অর্থ জামানত হিসেবে ব্যবহার করে ঋণ নেওয়া হয়। ঋণের জামানত রাখার পর নগদের অ্যাকাউন্টে তৈরি হয় ঘাটতি। ঋণ নেওয়ার তিন মাস পর বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১ সালের মে মাসে ট্রাস্ট ফান্ডের বিপরীতে ঋণ গ্রহণের সীমা নির্ধারণ করে একটি ট্রাস্ট ফান্ড ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন জারি করে।

ডাক বিভাগ প মবারের মতো অস্থায়ী লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করলে বাংলাদেশ ব্যংক প্রথম বার নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুকের মালিকানাধীন থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিসের ঋণের বিষয়টি উত্থাপন করে।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প মবারের মতো নগদের অন্তর্র্বতী লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়ালেও চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গ্রাহকদের অর্থের বিপরীতে নেওয়া ঋণ সামঞ্জস্য করার শর্ত দেয়।

এদিকে মোট ঋণের মধ্যে ৩১৭ কোটি টাকা অনাদায়ী হওয়ায় এক্সিম ব্যাংক বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করে। তারা জানায়, থার্ড ওয়েভ টেকনোলজির কাছে বারবার চাওয়ার পরেও তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এমএফএস লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী ঘাটতি পূরণের নির্দেশ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠিটি ডাক বিভাগের কাছে পাঠায়। ট্রাস্ট ফান্ডের ৩১৭ কোটি টাকার ঘাটতি পূরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ ডাক বিভাগ তানভীর আহমেদ মিশুককে চিঠি দেয়। মোট ঋণের ৩১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা বকেয়া হলে এক্সিম ব্যাংক চলতি বছরের মার্চ মাসে ঋণের জামানত থাকা নগদের ট্রাস্ট ফান্ড থেকে নিয়ে সেই অর্থ সমন্বয় করে।

নগদ গত ৫ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এক্সিম ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নগদ। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, এক্সিম ব্যাংক বেআইনিভাবে ঋণ সমন্বয় করেছে। ন্যায়বিচার দাবি করে এক্সিম ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহŸানও জানায় নগদ।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৬ মে নগদকে একটি চিঠিতে বলে, গ্রাহকের অর্থের বিপরীতে থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস-এর ঋণ নেওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। নগদকে এই নিয়ম লঙ্ঘন সম্পর্কে অবহিত করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশদানের পরেও তারা সেই নির্দেশাবলী অনুসরণ করেনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডাক বিভাগকে দেওয়া এক চিঠিতে বলেছে, থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস জনগণের অর্থকে বন্ধক হিসেবে ব্যবহার করে ঋণ নিয়েছে যার ফলে ই-মানির সঙ্গে প্রকৃত টাকার ঘাটতি তৈরি হয়েছে যা ২০১৮ সালের বাংলাদেশ মোবাইল আর্থিক পরিষেবা (এমএফএস) রেগুলেশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। নগদের ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রম সত্তে¡ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের অনুরোধ বিবেচনা করে গ্রাহকদের স্বার্থে অন্তর্বতীকালীন লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়িয়েছে বলে চিঠিতে বলা হয়।

তবে লাইসেন্সের শর্ত হলো, বাংলাদেশ ডাক বিভাগকে এক বছরের মধ্যে ঋণ সমন্বয় করতে হবে অথবা মালিকপক্ষকে নিজস্ব অর্থ জমাদানের মাধ্যমে জনগণের অর্থের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস এক্সিম ব্যাংকে জামানত হিসেবে থাকা অর্থের সমন্বয় না করা পর্যন্ত ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এককভাবে দায়ী থাকবে।

২০২১ সালের ২৩ মার্চ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় তানভীর আহমেদ মিশুক নগদের মালিকানার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, এ উদ্যোগটি বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের সঙ্গে আয় ভাগ করে নেওয়ার মডেলের ওপর ভিত্তি করে শুরু করা হয়েছিল। মডেলের অধীনে, নগদ কেবল সরকারের সঙ্গে আয় বা রাজস্ব ভাগ করবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স পেতে তাদের এখন এমএফএস গাইডলাইন অনুযায়ী শেয়ারহোল্ডিং মডেল গ্রহণ করতে হবে। শেয়ারহোল্ডিং মডেলে বাংলাদেশ পোস্ট অফিস ৫১ শতাংশ মালিকানা পাবে বলে জানান তিনি। #