দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যাগের উপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা কার্যকর এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ৬(ক) ধারার অধীন এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ব্যথতা নিয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খন্দকার দিলিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)সহ মোট ১১টি সমমনা সংস্থার পক্ষ থেকে জনস্বার্থমূলক রিট আবেদনের ( মামলা নং-১৪৯৪১/২০১৯) প্রাথমিক শুনানী শেষে রুলসহ আদেশ জারি করেন।
আদালতে রিটকারী বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং তাঁকে সহযোগিতা করেন সাঈদ আহমেদ কবীর।
হাইকোর্টের জারি করা রুলে আরো বলা হয়েছে, ২০২২ সালের মধ্যে দেশে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে এবং এসবের নিরাপদ বিকল্প চালু করার জন্য কেনো কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হবেনা । তাও চেয়ে জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।
উচ্চ আদালত দেশব্যাপী নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ, কারখানা বন্ধ এবং যন্ত্রপাতি জব্দ করণের মাধ্যমে পলিথিন/প্লাস্টিক ব্যাগের উপর বিদ্যমান আইনী নিষেধাজ্ঞা পূর্ণ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের সকল হোটেল, মোটেল এবং রেস্তোরায় এক বার ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিকপণ্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে ও সকল উপকূলীয় অ লে পলিথিন/প্লাস্টিকের ব্যাগ বহন, বিক্রয়, ব্যবহার, বিপণন এবং আগামী এক বছরের মধ্যে নিষিদ্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ আগামী ৫ জানুয়ারি, ২০২১ সালের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট।
রিট আবেদনকারীরা হলেন; বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), ঢাকা; এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলাপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো), ঢাকা; পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ঢাকা; ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়ুথ), কক্সবাজার; সেভ দি কোষ্টাল পিপলস্ (স্কোপ), বরিশাল; রীচ টু আন রীচ (রান), বরিশাল; বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বেডস), খুলনা; ইনিশিয়েটিভ ফর রাইটভিউ (আইআরভি), বরিশাল; এ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), রাজশাহী; সেল্ফ হেল্প এন্ড এ্যাডভান্সড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (শ্যাডো), রংপুর; সিলেট ও সেবা ফাউন্ডেশন, ময়মনসিংহ।
রিট আবেদনকারীগণ শুনানিতে উল্লেখ করেন যে পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর ১০,৯৫,০০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলাপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) জরিপ অনুযায়ী বার্ষিক ৮৭,০০০ টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বাংলাদেশে ব্যবহৃত হয়।
দেশে ব্যবহৃত একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-প্লাস্টিকের স্ট্র, কটনবাড, ফুড প্যাকেজিং, ফুড কনটেইনার, বোতল, প্লেট, প্লাস্টিক চামচ, প্লাস্টিক ব্যাগ ইত্যাদি। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ও বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে এসব প্লাস্টিক কৃষি জমি, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, নদী-নালা, খাল-বিল ও সমুদ্রে পতিত হয়ে এসব প্রতিবেশ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি করে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এর গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী পদ্মা নদীর মাধ্যমে প্রায় ৩০০ ধরনের প্লাস্টিক পণ্য বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির প্রতিবেদন অনুযায়ী পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা নদীর মাধ্যমে প্রায় ৭৩,০০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় বঙ্গোপসাগরে মাছের পেটে এবং লবণের মধ্যে ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে যা প্রাণিকুল ছাড়াও মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক সামগ্রী নিয়ন্ত্রণ ও রোধে বিভিন্ন আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও বাংলাদেশ এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। সে প্রেক্ষিতেই রিট মামলাটি দায়ের করা হয়।
রিটে আবেদনে বিবাদী করা গয়েছে – সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়; বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়; বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়; মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ প্লাষ্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক এসোসিয়েশনকে । #