বিশেষ প্রতিনিধি:
রাজধানীর উত্তরায় গার্ডর চাপায় প্রাইভেটকারের ৫জনের মৃত্যু এবং ২ জনের আহত হবার ঘটনায় চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির বিষয় উল্লেখ করেছেন তদন্ত কমিটি। উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে প্রাইভেটকারের ওপর পড়ার এই মর্মান্তিক হতাহতের ঘটনাটি ঘটেছে। তদন্ত কমিটির প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি রয়েছে বলে জানান। এই ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।
গত ১৬ আগস্ট সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সম্মেলন কক্ষে তিনি এসব কথা বলেন। আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ছুটির দিনে ঠিকাদারের কাজ করার কথা না। তারা কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই কাজ করছিল। এভাবে উন্মুক্ত রেখে কাজ করার কোনও সুযোগ নেই। নিয়মানুযায়ী কাজ করতে হলে আগের দিন তারা একটি ওয়ার্ক প্ল্যান দেবে, তাদের কতজন লোক থাকবে; কতগুলো ক্রেন লাগানো হবে, পুলিশকে জানাবে। গত ১৫ আগস্ট ঠিকাদার এগুলো না করেই কাজটা করেছে। কোনও অবস্থাতেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে এ ধরনের কাজ করার কোনও সুযোগ নেই।
ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে জানতে চাইলে সড়ক সচিব আমিন উল্লাহ বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুক্তি অনুযায়ী আমরা আমাদের চুক্তিতে যেমন থাকে জরিমানা করা হয়, কাজ টার্মিনেট করা হয় এবং তারা যেন আর কোনও কাজ করতে না পারে এজন্য ব্ল্যাকলিস্ট করা হয়। চূড়ান্ত রিপোর্টটা আসুক। আমি আজকেই চিঠি ইস্যু করবো, তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এত বড় ক্ষতির জন্য শুধু জরিমানা করা যাবে না। সর্বোচ্চ ব্যবস্থা যদি নেওয়া হয় তার লাইসেন্স চলে যাবে। বাংলাদেশে তারা আর কোনও কাজ করতে পারবে না।
তিনি বলেন, যে ক্রেনে গার্ডার তোলা হয়েছিল, সেটি এর জন্য সক্ষম কিনা, এটা তদন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিলে জানা যাবে। এটা কিন্তু সে ওপরে তুলছিল না, এটা স্থানান্তর করছিল। একটা সে সরিয়েছেও। নিয়মিত মামলা হয়েছে। আমরা লাশগুলো আজকে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। সেসময় অন্য কোনও অপারেটর ছিল না।
সড়ক সচিব বলেন, একটা অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠান কনসালটেন্ট। এ ধরনের কাজের ক্ষেত্রে কনসালটেন্ট থাকে কাজ বুঝিয়ে দিতে, তারা একটি ম্যাথডলজি দেয় কীভাবে করতে হবে। দেওয়ার পরে ফেল করলে এক কথা। তারপরেও কনসালটেন্টকে বলেছি তোমার খোঁজ নেওয়ার কথা। সে বলেছে, বন্ধের দিন তো কাজ করার কথা না।
উল্লেখ্য, ১৫ আগস্ট বিকেল সোয়া ৪টায় উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে নির্মাণাধীন বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে। গার্ডারটি গাড়ির দুই-তৃতীয়াংশ চাপা দেয়। বাম পাশে থাকা দুজন সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান“ হৃদয় ও রিয়া নবদম্পতি”। তবে হৃদয়ের বাবা রুবেল মিয়া, বোন ঝরনা বেগম, ফাহিমা আক্তার ও ঝরনার দুই শিশুসন্তান ঘটনাস্থলে মারা যায়।#