দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
এবার বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ১৭ জেলার মানুষ বন্যাকবলিত। এরমধ্যে ১২ জেলার মানুষের জন্য এক হাজার ৫৪৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে ৩০ হাজার ৭০৫ জন মানুষের সঙ্গে ৫৬ হাজার ৩১টি গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষে এসব মানুষ ও গবাদিপশুর খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা গবাদিপশুর মধ্যে কোরবানি উপলক্ষে খামারে পালিত গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়াই বেশি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ১৭টি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, মানিকগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, বগুড়া, মাদারীপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ ও নেত্রকোনা।
এসব জেলায় স্থাপিত আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষ ও গবাদিপশুর চিকিৎসার জন্য ৫৯৬টি মেডিকেল টিম গঠন করলেও ১৯৭টি টিম কাজ করছে। আশ্রয়কেন্দ্রের নিরাপত্তায় আনসার, গ্রাম পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক ও এনজিও প্রতিনিধিরা কাজ করছেন। রাতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।সূত্র জানায়, বন্যা মোকাবিলায় কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বন্যাকবলিত জেলাগুলোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও এ কাজে যুক্ত হতে নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিচ্ছেন।
ইতোমধ্যে সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ বাবদ মানবিক সহায়তা বিতরণ চলছে। প্রায় প্রতিদিনই এসব জেলার জন্য নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করার কাজ শুরু করেছেন। একাধিক জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বন্যা কবলিত এলাকাএদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলাসহ জামালপুর, ফরিদপুর ও সিলেটসহ ১২ জেলায় বন্যা হচ্ছে। বহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা নদীর পানি বাড়লে দেশের ২০ থেকে ২৪ জেলা বন্যাকবলিত হয়। এবারও দেশের এই চারটি নদীর পানি বাড়ার কথা আগেভাগেই জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
এ দফায় এগুলোসহ রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ এই ২৩ জেলা নতুন করে বন্যাকবলিত হবে। এসব অঞ্চলের জমির ফসল নষ্ট হতে পারে। মাছের ঘের পানিতে ভেসে যেতে পারে।
কুড়িগামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, এই জেলায় বন্যার চেয়েও ভয়াবহ হচ্ছে নদীভাঙন। বন্যার পানি নামতে শুরু করলেই যে ভাঙন শুরু হবে তা থেকে ফসসি জমি, পশুর খামার রক্ষা করা কঠিন কাজ। বন্যার পানি নেমে গেলে তো বাড়িঘর থাকে। কিন্তু নদীভাঙনে তো মানুষ রাস্তার ফকির হয়ে যায়।
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতিতিনি আরও জানান, এই মুহূর্তে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু অবিরাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সরকারের সব ধরনের সহায়তা নিয়ে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। স্কুল কলেজগুলো বন্ধ থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করার কাজটি অনেক সহজেই করা গেছে। গবাদিপশুগুলোকেও আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছি। মানুষের সঙ্গে গবাদিপশুর খাবারের ব্যবস্থাও রেখেছি।
এদিকে গাইবন্ধার জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন জানিয়েছেন, জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। বৃষ্টিপাত হলে পরিস্থিতির অবনতি হবে। আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছি। এগুলোতে মানুষের পাশাপাশি তাদের পালিত গবাদিপশু রাখারও ব্যবস্থা করেছি। তাদের খাবারের ব্যবস্থাও করছি। আমরা আশ্রয়কেন্দ্রের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। সেখানে গ্রাম পুলিশ, আনসার ডিউটি করছে। এখানে সরকারি সহায়তার কোনও ঘাটতি নাই। আমরা তা ঠিকমতো পৌঁছে দিচ্ছি। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিরা জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করছেন।
বন্যা কবলিত এলাকাএ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, বন্যার কবল থেকে মানুষ ও তাদের সম্পত্তি রক্ষায় সরকার সব ব্যবস্থা নিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় ৪ হাজার ৮৫০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, বন্যাদুর্গত জেলাগুলোতে নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক কোটি ৯১ লাখ টাকা। শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৮২২ প্যাকেট। শিশুখাদ্য কেনা বাবদ ২১ লাখ ও গো-খাদ্য কেনা বাবদ ২১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। # কাশেম