বিশেষ প্রতিনিধি, দূরবীণ নিউজ :

আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই উঠে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি। গতকাল ৩০ জুন (বুধবার) জাতীয় সংসদ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে খালেদা জিয়াকে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে ।

আইনমন্ত্রীর দেয়া ওই বক্তব্যের জবাবে আজ বৃহস্পতিবার ( ১ জুলাই) দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বে থাকা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দলের এই প্রতিক্রিয়া জানান।

সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘যিনি কোনো অপরাধই করেন নাই তার ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী সরকারের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটেছে যা ভ্রষ্টাচার ছাড়া কিছুই নয়।”

‘‘ এগুলো তাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ এবং রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ ও কুলষিত করার ব্যর্থ চেষ্টা বলে আমরা মনে করি। কর্তৃত্ববাদী সরকার যখন যেটা মনে করে সেটি জনগনের উপর চাপিয়ে দেয় এবং একই সাথে জনগনকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালায়। আমরা আইনমন্ত্রীর সংসদে প্রদত্ত বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

তিনি বলেন, ‘‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে অসুস্থ। তিনি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ৫৩দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার পোস্ট কোভিড জটিলতার নিরসন হলেও বর্তমান তিনি লিভার, কিডনী ও হার্টের বিভিন্ন জটিলতায় তীব্র অসুস্থ অবস্থায় নিজ বাসভবনে চিকিৎসাধীন আছেন। তার চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে আরো উন্নত সেন্টারে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন যা বাংলাদেশ সম্ভব নয়।”

তিনি বলেন,‘‘ আমরা সরকারকে ছলচাতুরী ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরিহার করে দেশের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় নেত্রী, তিন বারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার জন্য আহবান জানাচ্ছি।”

গতকাল ৩০ জুন  সংসদ আইনমন্ত্রী অ্যাডভেকেট আনিসুল হক বলেন, ‘‘ খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদন মঞ্জুর করে সরকার তার দণ্ডাদেশ স্থগিত রেখে মুক্তি দিয়েছে। সেখানে বিদেশে না যাওয়ার শর্ত রয়েছে। এখন তা বদলানোর সুযোগ নেই।”

‘‘ কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে মুক্তি দিতে হলে সেটা আইনের মাধ্যমেই করতে হবে, অন্যভাবে কারো …। এক্ষেত্রে একটা উপায় আছে, তারা মহামান্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাইতে পারে বা ৪০১ ধারায় সরকারের কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন।ক্ষমা চাইলে উনারা বিবেচনা করলে ক্ষমা করতে পারেন। আর সেই ক্ষমা চাইতে গেলে অবশ্যই দোষ স্বীকার করে চাইতে হবে।”

সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ মানবিক বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এরপর থেকে তিনি গুলশানের বাসাতেই আছে।

গত ১৪ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ২৭ এপ্রিল বসুন্ধরার এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা। ৫৩দিন পর গত জুন তিনি আবার বাসায় ফেরেন।

তিনি বলেন, ‘‘ সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে ভয় পায়, ভয় পায় তার জনপ্রিয়তা ও নেতৃত্বকে। এজন্য তারা ফরমায়েসী রায়ের ওপর ভিত্তি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে আটকে রেখে তাকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে এবং তার উন্নত চিকিৎসার পথে বাঁধা সৃষ্টি করে তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে চায়।”

‘‘ আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই,দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। ক্ষমতা জবরদখলকারী সরকারের মন্ত্রীরা রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ফয়দা হাসিলসহ বিরোধী দল ও জনগনকে নেতৃত্বশূণ্য করার ষড়যন্ত্র করছে, এটি জনগন বরদাশত করবে না।”

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘ সরকারের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমসহ করোনা প্রতিরোধে সামগ্রিক ব্যর্থতা ঢাকতেই সরকার বার বার লকডাউন দিচ্ছে এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সেগুলোও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে।

দিন আনে দিন খায়, নিম্ন আয় ও কর্মহীন মানুষকে অর্থ ও খাদ্য সহায়তা না দিয়ে লকডাউন, শাটডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ কখনো কার্য্কর কিংবা বাস্তবায়িত হয় না।”

‘‘ আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে অবিলম্বে জেলা-উপজেলায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত বেড অক্সিজেন, সিলিন্ডার,-পয়েন্ট-হাইফ্লো নজেল, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ বেড স্থাপন/বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ এবং বিনামূল্যে অধিকহারে করোনা পরীক্ষা ও সকলকে দ্রুত টিকার আওতায় এনে নিম্ন ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য বিনামূল্যে করোনা চিকিৎসার আহবান জানাচ্ছি।”

সংবাদ সম্মেলনে  দলের সহ সাংগঠিনক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ ও ছাত্র দলের দফতর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি উপস্থিত ছিলেন।
/এডিজেড/একে/দূরবীণ নিউজ