দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
করোনা ভাইরাসের কারণে আরব আমিরাতের মসজিদগুলো বন্ধ। ফলে জুমার নামাজ এবং এমনকি তারাবির নামাজও বাসায় আদায় করতে হয়েছিল আমিরাতে বসবাসরতদের। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় সে সুযোগও আর হয়নি!
রোববার ( ২৪ মে) আমিরাতে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। ঈদ হলেও ঈদের আমেজ নেই কারো মনে। আগের ঈদগুলোতে প্রবাসীদের ঈদ কাটত কিছুটা সুখমিশ্রিত অশ্রুজলে। প্রবাসীদের অনেকেই ঈদের নামাজ পড়ে রুমে এসে কিছু খেয়ে পরিবার পরিজনের সাথে মোবাইলে কথা বলে ঈদের আনন্দটাকে কিছুটা হলেও শেয়ার করার চেষ্টা করতেন।
কথা শেষে দেন লম্বা একটা ঘুম দিয়ে বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠতেন আবার কেউ কেউ পার্ক বা সাগরপাড়ে ঘুরতে যেতেন। অনেকে আবার ছুটিতে কোনো বন্ধুর বাসায় বেড়াতে যেতেন। এভাবে দু’তিন দিন কাটিয়ে আবার দৌড়াতেন কর্মস্থলে, আবার কর্মযজ্ঞ, ব্যস্ততা।
কিন্তু প্রবাসীদের জন্য এবারের ঈদ ভিন্ন রকমের। করোনা ভাইরাস সবকিছু পাল্টে দিয়েছে। এবারের ঈদে অনেক প্রবাসী দেশে টাকা পাঠাতে পারেননি। করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন অনেক প্রবাসী। কারো চাকরি নেই কারো কারো চাকরি থাকলেও বেতন নেই! যাদের ছোটখাটো ব্যবসা ছিলো তাদেরও একই অবস্থা। রুমে বা বাসায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ঈদের সময় কাটাচ্ছেন। অনেক প্রবাসী আছেন যারা ২/৩ বছর পর ঈদের সময় লম্বা ছুটিতে দেশে যান। কিন্তু এবার বিমানের টিকিট কিনেও দেশে যেতে পারেননি।
ঈদের দিনগুলোতে আমিরাতের অত্যধিক গরমের কারণে অনেকেই বাসা থেকে বের না হলেও এক দিনের জন্য আমিরাতের বিভিন্ন প্রদেশে বাংলাদেশীদের মিলনমেলায় পরিণত হতো। দুবাই’র দেরা বাংলা বাজার, শারজাহ’র রোলা, আজমান বিচ, আবুধাবির কর্ণিশ, আলা আইনের সানাইয়া এলাকায় বিপুলসংখ্যক স্বজনবিহীন বাংলাদেশীদের উপস্হিতি স্বল্প সময়ের জন্য হলেও ভুলিয়ে রাখতো আপন মানুষদের শূন্যতা!
ইমাম হোসেন নামের এক আমিরাতপ্রবাসী ফেসবুকে লিখেছেন, বৈশ্বিক মহামারী, ঈদের নামাজ ঈদগাহে বা মসজিদে পড়া যাবে না, আত্মীয় স্বজনসহ পাবলিক গেদারিং করা যাবে না, ঘুরতে যাওয়া যাবে না, পরিবারের থেকে দূর প্রবাসে আছি এসব কারণে ঈদের আনন্দ অনেকটাই ম্লান লাগছে।
সরকারি নির্দেশনা মেনে মসজিদ বা ইদগাহে সম্মিলিত জামাত নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে বাসার সামনে শুধুমাত্র রুমের লোকজন মিলে ঈদের নামাজ আদায় করেছি। তারপরও আলহামদুলিল্লাহ্।
করোনা পরিস্থিতি, এবার সবকিছুতে আঘাত হেনেছে আমিরাতের দর্শনীয় স্থানসমুহ পরিদর্শনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে। আরবদের পাশাপাশি অভিবাসীরা পারছেন না বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে, পারছেন না দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে। রুমে বসে বাড়িতে মোবাইলে কথা বলে এবং ফেসবুকে সময় কাটাতে হচ্ছে প্রবাসীদের।
সব মিলিয়ে ভয়ানক অভিজ্ঞতা ও কষ্টের ইতিহাস যোগ হবে প্রবাসীদের এবারের ঈদে। তবুও আশায় থাকে মানুষ। আশায় বাঁচে মানুষ। বেদনার অশ্রুজল একদিন থেমে যাবে। ভরসা রাখতে হবে মহান আল্লাহপাকের উপর। আল্লাহ এমন পরিস্থিতি থেকে সবাইকে উদ্ধার করবেন এ বিশ্বাস নিয়ে প্রবাসীদের আগামীর পথ চলতে হবে। #