বিশেষ প্রতিনিধি,দূরবীণ নিউজ :
সরকারের ‘অপরিকল্পিত লকডাউনে জনজীবন বিপন্ন’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।আজ (২৬ জুলাই) সোমবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ এই ভয়াবহ বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সময়ে এই সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে। তাদের উদাসীনতা, তাদের অযোগ্যতা, তাদের ব্যর্থতা, তাদের দুর্নীতি আজকে দেশকে এবং দেশের মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে ফেলেছে, জীবিকা বিপন্ন করে ফেলেছে।”
“ এই যে অপরিকল্পিত লকডাউন এবং তারা যে সমস্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে বেড নেই, অক্সিজেন নেই, আইসিইউ বেড নেই এবং ঔষধ নেই-এই একটা অবস্থা তারা(সরকার) সৃষ্টি করেছে। এর ভয়াবহতায় জনগনের জীবন আজকে বিপন্ন। করোনা হবে চিকিৎসা পাবে, ভুল চিকিৎসা হবে, গরীব মানুষ চিকিৎসার অভাবে রাস্তায় পড়ে থাকবে এটা মেনে নেয়া যায় না।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “ আমরা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছিলাম প্রান্তিক মানুষকে যেন তিন মাসের জন্য যে সময়টা লকডাউন চলবে সেই সময়টাতে একালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে দেয়া হয়। তারা(সরকার) যে সমস্ত কোনো কথাই শুনেনি।”
“ আজকের পত্রিকাতে আছে যে, তারা ওই যে, ২৮ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে তার শতকরা ৮৬% ভুয়া। অর্থাৎ তারা যে নামগুলো দিয়েছে সেখানেও তারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নামগুলো দিয়েছে যাতে করে তারা সেই টাকা নিয়ে নিতে পারে। এটা সর্বক্ষেত্রেই হচ্ছে।”
‘সিলেট উপনির্বাচনে গ্রেপ্তার-হয়রানি’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আজকে ভয়ংকর করোনা সংক্রমণ মহামারী চলছে এর মধ্যেও তারা(নির্বাচন কমিশন) সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন করছেন। এতো বলার পরেও হাইকোর্টে রিট করার পরেও তারা সেটা থেকে বিরত হননি। জোর করে এই নির্বাচন করে আরো একটা বিরাট অংশকে তারা বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন।”
“ এই নির্বাচনে আমরা অংশ গ্রহন করছি না। অথচ আমাদের নেতা-কর্মীদের অস্থির করে রেখেছে, বাড়ী বাড়ী রেইট করছে, তাদের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে, তাদেরকে গ্রেপ্তার করছে।”
‘বিরাজনীতি করণের প্রক্রিয়া’
মির্জা ফখরুল বলেন, “এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য, একদলীয় একটা শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য যেটা তারা ১৯৭৫ সালে করেছিলো বাকশাল সৃষ্টির মাধ্যমে করেছিলো আজকে তারা সেটা করতে ওই অবস্থাটাই সৃষ্টি করেছে। এটা একদিনে হয়নি, ধীরে ধীরে ক্রমান্বয়ে সুচতুরভাবে এই অবস্থাটা তারা সৃষ্টি করেছে। এর মূল বিষয়টা ছিলো ১/১১ যে ঘটনা। ১/১১ এর মূল্য লক্ষ্য ছিলো বিরাজনীতিকরণ করা। সেটাই হচ্ছে এখন।’’
“ তথাকথিত পার্লামেন্টে চিৎকার করে তারা(আওয়ামী লীগ) বলে যে, আমলা এখন সব কিছু দখল করে নিয়েছে। আমলারা দখল করে নিয়েছে এজন্য যে, আমলাদেরকে দখল করতে দেয়া হয়েছে। রাজনীতি নেই, রাজনীতিবিদরা দূরে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই সরকার কার উপরে টিকে আছে। জনগনের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নাই। আমলা এবং কিছু দুর্নীতিপরায়ন ব্যক্তি তাদের যোগসাজসে আজকে তারা ক্ষমতায় টিকে আছে।”
বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “ এখনকার যে পৃথিবী, এখনকার যে রাজনীতি এই রাজনীতিটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটা নষ্ট সময়, একটা ভয়ংকর সময়, যে সময়টা রাজনীতিকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করে না, যে সময়টা মানুষকে রাজনীতিতে সঠিকভাবে গঠিত হওয়ার সুযোগ দেয় না। যে রাজনীতি শুধুমাত্র নষ্টের দিকে যায়, খারাপের দিকে যায়, যে রাজনীতি মানুষকে খারাপ করে তোলে এই রাজনীতির সময় কিন্তু চলছে।”
“ শুধু বাংলাদেশে নয়, সমগ্র বিশ্বেই এই একটা নষ্ট সময় চলছে। যে নষ্ট সময়টাতে রাজনীতিবিদদের ভালো থাকা, রাজনীতিবিদদের সঠিক রাস্তায় যাওয়া, রাজনীতিবিদদের সঠিকভাবে রাজনীতিকে নির্মাণ করা-এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। সব চেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে যে, এখন রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করছেন না, রাজনীতিবিদরা রাজনীতিতে নেই।”
তিনি বলেন, “ এখন রাজনীতি নির্মিত হয় রাজনীতির বাইরে কিছু শক্তিশালী মহল, কিছু শক্তিশালী দেশ, শক্তিশালী রাষ্ট্র অথবা কিছু শক্তিশালী শক্তি ইন্টারনাল ইনসাইড দি কাউন্ট্রি তারা রাজনীতিকে নির্মাণ করে এবং সেখানে রাজনীতিবিদের যে কথাটা বরকতউল্লা বুলু সাহেব বলেছেন- ট্র্যাম্পট হওয়া। সেই ট্র্যাম্পট তো অনেক আগে থেকে হয়ে আছে।এই রাজনীতি ট্র্যাম্পট হয়ে চলে গেছে যেখানে রাজনীতিবিদদের হাতে আর সেই ক্ষমতা নেই।”
“ ৯০, ৬৯ আন্দোলনের কথা এবং ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের কথা যদি বলি, সেই সময়টা আর এই সময়টা গত একযুগের বেশি সময় ধরে এই সময় চলছে ভিন্ন সময়। এর মধ্যেও আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা বিএনপিকে ধরে রেখেছি, ধরে রাখার চেষ্টা করেছি, ধরে রাখতে পেরেছি।
বিএনপিকে অনেকবার ভাঙার চেষ্টা হয়েছে, অনেকবার বিএনপিকে ধবংস করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে কিন্তু বিএনপিকে কখনোই ভেঙে ফেলতে পারেনি।কারণ একটাই আমাদের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে দর্শন দিয়েছেন সেটা জনগনের অন্তুরের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ সার্বিকভাবে একটাই কথা- এই সরকারকে যদি না সরানো যায়, তাহলে ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের যে মূল লক্ষ্য ছিলো ,সেই লক্ষ্য পুরোপুরিভাবে ধবংস হয়ে যাবে।এখন এটা সারা দেশের মানুষের দায়িত্ব এই সরকারকে সরাতে হবে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।”
“ বিএনপির দায়িত্বটা বেশি যে বিএনপিকেই এর নেতৃত্ব নিতে হবে এবং সেজন্য আমাদের যেটা প্রয়োজন- আমাদের কখনো হতাশ হওয়া যাবে না, হতাশা ও ব্যর্থতা নিয়ে এগুনো যাবে না। আমাদেরকে অবশ্যই আশাবাদী হতে হবে, জনগনকে সংগঠিত করতে হবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন। অনেক বাধা-বিপত্তি, অনেক সুবিধা-অসুবিধার মধ্যেও কাজ হচ্ছে, সেই কাজগুলোকে আমাদের একত্রিত করতে হবে।”
প্রয়াত আউয়াল খানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপি প্রয়াত সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আবদুল আউয়াল খান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘স্মৃতিতে অম্লান’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল স্মরণ সভা হয়।গত বছরের ২০ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান আবদুল আউয়াল খান।
আবদুল আউয়াল খান ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা সাবেক হুইপ মনিরুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও ফাউন্ডেশনের আহবায়ক অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সঞ্চালনায় এই ভার্চুয়াল আলোচনায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও প্রয়াত আবদুল আউয়াল খানের ছেলে আসাদুজ্জামান খান বক্তব্য রাখেন।
এডিজেড/ একে/দূরবীণ নিউজ