দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন সরকার ও সশস্ত্র সংগঠন তালেবান নেতাদের মধ্যে কাতারের রাজধানী দোহায় এক সংলাপে চলছে। । আজ শনিবার (১৭ জুলাই) আফগান সরকার ও তালেবানের প্রতিনিধি দলের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে খবর জানায় কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
আফগানিস্তানের সাবেক প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ সরকারি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সরকারি প্রতিনিধি দলের মুখপাত্র ফারিদুন কাওয়াজুন বলেন, ‘আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ তার সফরে তালেবান প্রতিনিধিদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যক বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা করবেন।’সংলাপে অংশ নেয়া তালেবান প্রতিনিধি দল – ছবি
তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানে সংঘাতের সমাধান আলোচনার মধ্যেই রয়েছে এবং সংলাপের মধ্য দিয়ে শান্তি আসতে পারে।’
অপরদিকে তালেবান মুখপাত্র মোহাম্মদ নাইম জানান, তাদের সংগঠন বারবার সংলাপ ও আলোচার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, ‘সংলাপের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হতে পারে।’
মোহাম্মদ নাইম আরো বলেন, ‘তবে আফগান সরকারেরও একই রকম প্রত্যয় প্রকাশের প্রয়োজন। তাদের উচিত সমস্যার সমাধানে আলোচনায় সঠিক ও আন্তরিক ইচ্ছাশক্তি প্রদর্শন করা।’
দোহায় সম্মেলনস্থল থেকে আলজাজিরার প্রতিনিধি ওসামা বিন জাভায়িদ জানান, দুই পক্ষ সংলাপ আগানোর কথা জানালেও বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন কথা বলছে।
তিনি বলেন, ‘আফগান পক্ষ জোর করছে কোনো বাস্তব সংলাপের আগেই যুদ্ধবিরতি স্থাপন করার। অপরদিকে তালেবান জোর করছে তাদের সংস্করনের শরীয়া আইন বাস্তবায়ন। সাথে সাথে তারা আফগানিস্তানের সকল পক্ষকে নিয়ে সমন্বিত এক সরকার গঠনের দাবি করছে।’সংলাপে অংশ নিতে আসা আবদুল্লাহ- ছবি
অপরদিকে কাবুল থেকে আলজাজিরার প্রতিনিধি শার্লট বেলিস জানান, তালেবান ধীরে ধীরে রাজধানী কাবুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
গত এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণা অনুসারে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার চলছে। পেন্টাগনের তথ্য অনুসারে ইতোমধ্যেই দেশটি থেকে ৯৫ ভাগ সৈন্য প্রত্যাহার শেষ হয়েছে।
এরই মধ্যে আফগান সরকারের সাথে সমঝোতা না হওয়ার জেরে সশস্ত্র সংগঠন তালেবান দেশটির বিভিন্ন স্থানের নিয়ন্ত্রণ নেয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই দেশটির ৮৫ ভাগের বেশি এলাকা তালেবানের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার তথ্য জানিয়েছে দলটি।
২০০১ সালে মার্কিন আগ্রাসনের সময় আফগানিস্তানে ক্ষমতায় তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠিত ছিল।
ওই বছর ১১ সেপ্টেম্বর নাইন ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার জেরে ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন আগ্রাসন চালায়। ২০ ডিসেম্বর জাতিসঙ্ঘ আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক নিরপত্তা সহায়ক বাহিনীর অবস্থানের অনুমোদন করলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের অংশীদার ৪৩টি দেশের সৈন্য দেশটিতে অবস্থান নেয়।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ আলোচনার পর কাতারের রাজধানী দোহাতে এক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির অধীনে তালেবান সহিংসতা ছেড়ে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণে সম্মত হয়। বিনিময়ে দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল বিদেশী বাহিনীকে এই বছর ১ মে সময়সীমায় প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তবে গত ১৪ এপ্রিল হোয়াইট হাউজে এক ঘোষণায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নতুন করে এই সময়সীমা ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ান। বাইডেনের ঘোষণা অনুসারে আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য ৩৫টি দেশের নয় হাজার পাঁচ শ’ ৯২ সৈন্য প্রত্যাহারের কথা রয়েছে।
মার্কিনিদের সাথে চুক্তি অনুসারে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারের সাথে তালেবানের সমঝোতায় আসার কথা থাকলে এখনো কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি দুই পক্ষ। সমঝোতায় না পৌঁছানোর জেরে তালেবান আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে। সমঝোতা না হওয়ার জন্য আফগান সরকারকে অভিযুক্ত করছে তালেবান।
# সূত্র : আলজাজিরা